বাংলা ভাষাবিজ্ঞানিদের তালিকা
ইন্টারনেটে বাংলা ভাষাবিজ্ঞানিদের ও তাদের কাজের তালিকা একেবারেই অপ্রতুল। সে কথা মাথায় রেখেই ভাষাবিজ্ঞানি ড. নিলাদ্রি শেখর দাস এর নির্দেশনা অনুসারে এই সংকলনটি তৈরি করা হল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়াসহ বেশকিছু সাইট ঘেটে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। নিলাদ্রি শেখর দাস এর দেয়া তথ্য এবং মুহম্মদ মনজুর হোসেন খান এর একটি প্রবন্ধ থেকেও সাহায্য নেয়া হয়েছে। যেহেতু সম্পুর্ণ অবাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যে কাজটি করা হলো তাই পদ্ধতিগতভাবে রেফারেন্স দেয়ার আলাদা ঝামেলা পোহাইনি।
ক্রমান্বয়ে আরো তথ্য সন্নিবেশিত করার আশা রাখি।
দোম আন্তোনিয়(১৭শ-১৮শ শতক)
বাংলা গদ্যরীতির প্রথম লেখক ও বাংলায় খ্রিস্টধর্মের প্রচারক। আন্তোনিও ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক সম্বাদ নামে ১২০ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ রচনা করেন যা বাংলা সাধু গদ্যরীতির আদি নিদর্শন হিসেবে খ্যাত। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটি সুরেন্দ্রনাথ সেনের সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্প সাঁও (Manoel da Assumpcam)
অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারীতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ মিশনারি পাদ্রি ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্প সাঁও সর্বপ্রথম ভোকাবোলারিও এম ইদিওমা বেঙ্গালা, এ পোর্তুগুয়েজ দিভিদিদো এম দুয়াস পার্তেস (পর্তুগিজ: Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes) নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন।
তাঁর গ্রন্থটি দুটি অংশে বিভক্ত: প্রথম অংশ বাংলা ব্যাকরণের একটি সংক্ষিপ্তসার এবং দ্বিতীয় অংশ বাংলা-পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দাভিধান। গ্রন্থটি পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান হরফে মুদ্রিত হয়। এর কাঠামোগত আদর্শ গৃহীত হয়েছে লাতিন ব্যাকরণ থেকে, তাই এতে বর্ণিত হয়েছে লাতিন ভাষার ধাঁচে। আর এতে শুধু রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বই আলোচিত হয়েছে, ধ্বনিতত্ত্ব সম্পর্কে কোনো আলোচনা নেই।
রামকমল সেন (১৭৮৩-১৮৪৪)
ফেলিক্স কেরীর সহায়তায় ১৮১৭ থেকে ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত সতেরো বছর যাবৎ দেশীয় পন্ডিতদের দ্বারা দুই খন্ডে ইংরেজি-বাংলা অভিধান সংকলন করানো তাঁর এক অসাধারণ অবদান। তিনিই প্রথম এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। ১৮৩৪ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তাঁর অভিধানটির নাম ইঙ্গরেজি-বাঙ্গলা অভিধান (A Dictionary of English and Bengalee)।
নাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড(১৭৫১-১৮৩০)
নাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড (জন্ম: ২৫শে মে, ১৭৫১-মৃত্যু: ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৩০) বা হালেদ ছিলেন একজন ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ও বৈয়াকরণ। তিনি বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণ রচয়িতা তিনি আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ (ইংরেজি: A Grammar of the Bengal Language) নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। তিনিই প্রথম বৈয়াকরণ যিনি বাংলা ব্যাকরণ রচনায় উদাহরণের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ ও বাংলা লিপি ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত ব্যাকরণ ১৭৪৩ সালে লিসবন থেকে পর্তুগীজ ভাষায় রচিত হয়, কিন্তু হ্যালহেডের ব্যাকরণ ইংরেজিতে রচিত এবং এতে বাংলায় প্রচুর উদাহরণ, উদ্ধৃতি ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। তবে হ্যালহেডের একটা দুর্বলতা ছিল এই যে, তিনি বাঙলা ভাষা ভাল করে না জেনেই বাঙলা ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় সুদূরপ্রসারী কোনো ফল দেখা যায় নি, যদিও তাঁর মাধ্যমেই বাঙলা ব্যাকরণ আধুনিকতার দিকে এগিয়ে থাকে। । তাঁর A Grammar of the Bengal Language প্রকাশিত হয় ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে। হ্যালহেড ভাল সংস্কৃত জানতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলা ভাষার উদ্ভব সংস্কৃত থেকে। তাই তাঁর ব্যাকরণে সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব লক্ষণীয়। হ্যালহেডের ব্যাকরণের বিষয়বিন্যাস সেকালের ইংরেজি ব্যাকরণের অনুরূপ হলেও মাঝে মাঝে তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের মূল সূত্রগুলিও ব্যাখ্যা করেছেন। মনোএল যেমন বাংলা ভাষাকে লাতিন ব্যাকরণের ছাঁচে ফেলে তাঁর গ্রন্থ প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন, হ্যালহেড তেমনি অনেকাংশেই বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের ছাঁচে ফেলে বিশ্লেষণ করেছেন। একারণে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের পারিভাষিক শব্দকে বাংলা ব্যাকরণের পারিভাষিক শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন।
হ্যালহেডের ব্যাকরণ সম্পূর্ণ ইংরেজিতে রচিত হলেও এতেই প্রথম বাংলা হরফ মুদ্রিত হয়, এ কারণে বাংলা মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে গ্রন্থটি মূল্যবান। চার্লস উইলকিনসন এবং পঞ্চানন কর্মকার যৌথ প্রচেষ্টায় ছাপাখানার জন্য যে বাংলা হরফ (font) প্রবর্তন করেন, তার সাহায্যেই হ্যালহেডের গ্রন্থে বাংলা উদাহরণগুলি মুদ্রিত হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু দীর্ঘ কবিতার উদাহরণও বাংলা হরফে মুদ্রিত হয়েছে।
হেনরি পিটস ফরস্টার
বাংলা ভাষার প্রথম পুর্নাঙ্গ অভিধান প্রণেতা ছিলেন হেনরি পিটস ফরস্টার। ১৭৯৯ সালে তার বাংলা ভাষার প্রথম উচ্চাশী অভিধান ১ম খন্ড বের হয়। ১৮০২ সালে অভিধানটির ২য় খন্ড বের হয়। ১ম খন্ড ছিল ইংরেজি থেকে বাংলা আর ২য় খন্ডে ছিল বাংলা থেকে ইংরেজি।
উইলিয়াম কেরি(১৭৬১-১৮৩৪)
উইলিয়াম কেরি মূলত একজন ধর্মজাযক ছিলেন। বাংলা ভাষার গদ্যরীতির পুরোধা হিসেবে তিনি পরিচিত। ১৭৯৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি নিজের পরিবার নিয়ে জন টমাস নামে একজন ব্যাপটিস্ট মিশনারির সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় এসেই তিনি রামরাম বসুর কাছে বাংলা শিখতে আরম্ভ করেন, এবং পরে তাঁর সাহায্য নিয়ে বাংলা ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করা শুরু করেন। তিনি শ্রীরামপুর মিশনে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন, পরবর্তীতে যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছাপাখানা হিসেবে খ্যাত হয়। ১৮০১ সালের মে মাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয় এবং কেরিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কেরীর অধীনে কয়েকজন বাঙালি পন্ডিত এবং মুনশিও নিযুক্ত করা হয়।
এদেশীয় পন্ডিতদের নিয়ে কেরী শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করার মতো কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেন। রামরাম বসু এবং মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রথম দু বছরে তিনটি গ্রন্থ এবং কেরী একটি বাংলা ব্যাকরণ ও আদর্শ সংলাপের একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। পরে তিনি একটি বাংলা-ইংরেজি অভিধান এবং ১৮১২ সালে ইতিহাসমালা নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
তাঁর নির্দেশনায় তাঁর সহকর্মীরা যে-পাঠ্যপুস্তকগুলি রচনা এবং প্রকাশ করেন, সেগুলি বাংলা গদ্যের আদর্শ গঠন করে দেয়। পরে যাঁরা বাংলা ভাষায় লেখেন, তাঁরা অনেকেই এ রীতি গ্রহণ করেন। সে অর্থে কেরী বাংলা গদ্যরীতিকে একটি বিশিষ্ট ধারায় রূপ দেন।
রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২ – ১৮৩৩)
বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ীয় ব্যাকরণ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন যা কোন বাঙালি রচিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণ। এটি তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ। এর আগে তিনি ইংরেজিতে Bengali Grammar in the English Language নামের একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। গৌড়ীয় ব্যাকরণ রচিত হয় তৎকালীন স্কুল-বুক সোসাইটির অভিপ্রায়ে এবং ছাত্রদের পাঠোপযোগী করে। সর্বমোট বারোটি অধ্যায়ে এটি বিন্যস্ত। প্রথম অধ্যায়ে ধ্বনি, বর্ণ, উচ্চারণ, শব্দ, অক্ষর প্রভৃতি সম্পর্কে দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থে বাংলা ভাষার স্বকীয় উচ্চারণ-পদ্ধতি সম্পর্কে রামমোহন কিছু মৌলিক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বাংলা ভাষার লিঙ্গ, প্রত্যয়, পদান্বয়, বাক্যরীতি, ছন্দ ইত্যাদি। মোটামুটিভাবে গৌড়ীয় ব্যাকরণে বাংলা ভাষার ধ্বনি ও রূপগত বৈশিষ্ট্যের বৈয়াকরণিক বিশ্লেষণ রয়েছে।
এ গ্রন্থে রামমোহন রায়ের রচনারীতি স্বকীয় এবং ব্যাখ্যামূলক। তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করেন যে, বাংলা ব্যাকরণ সংস্কৃত ব্যাকরণ-পদ্ধতির অনুসরণ করে না। তিনি ব্যাকরণ আলোচনায় দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করেছেন খাঁটি তদ্ভব শব্দ ও বাংলা ক্রিয়াপদ। তাঁর মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলা ভাষার বিশিষ্টতাকে নিয়মশৃঙ্খলায় শ্রেণিবদ্ধ করা। গৌড়ীয় ব্যাকরণের বক্তব্য ও ভাষা প্রাঞ্জল ও সরল যা রামমোহন রায়ের অন্যান্য গ্রন্থের তুলনায় অনেক বেশি সহজ ও আধুনিক। রামমোহন রায় বিদেশী বা টোল-চতুষ্পাঠীর পন্ডিতদের মতো বাংলা-সংস্কৃতের সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বাংলা ভাষার নিজস্ব উপাদান ও স্বাতন্ত্র্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
রামমোহন কেরী বা হটনের মতো সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ককে বড় করে দেখেননি। তিনি বাংলা ভাষার একটি মূল প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলেন। তাই তিনিই প্রথম ব্যাকরণের বিভিন্ন প্রকরণঃ বিশেষ্য, বিশেষণ, কারক ইত্যাদি সম্পর্কে শুধু দৃষ্টান্ত নয়, খানিকটা তাত্ত্বিক আলোচনাও পাঠকের জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করেছেন। রামমোহন তাঁর আলোচনায় কোথাও সর্বজনবিদিত সংস্কৃত ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ ও পরিভাষা ব্যবহার করেছেন, আবার কোথাও বাংলা ভাষার প্রকৃতির প্রয়োজনে নতুন সংজ্ঞার্থ ও পরিভাষা রচনা করেছেন। ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি তাঁর গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে যে আলোচনা করেছেন, কালের দিক থেকে তা ছিল সম্পূর্ণ বিপ্লবাত্মক। তিনি ব্যাকরণকে কোনো ঔচিত্যমূলক শাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেননি, বরং ব্যাকরণকে তিনি দেখেছেন ভাষার বিশ্লেষণ বা বর্ণনামূলক শাস্ত্র হিসেবে। পদ ও পদের বিভাজন, সন্ধি, সমাস, বিশেষত case ও case-এর শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে রামমোহনের ধারণা সমকালের সকল ব্যাকরণবিদদের ধারণার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, অভিনব ও বাংলা ভাষার মূল প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
রেভারেন্ড ডব্লিউ ইয়েটস (১৭৯২-১৮৪৫)
Rev. W Yates যথার্থ ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। তাঁর ব্যাকরণটির নাম Introduction to the Bengali Language (১৮৪৭)। ইয়েটসের ব্যাকরণ দুটি খন্ডে পরিকল্পিত: প্রথম খন্ডে আলোচিত হয়েছে বাংলা ব্যাকরণ এবং দ্বিতীয় খন্ডে সংকলিত হয়েছে বাঙালি কবিদের কবিতা ও সাময়িক সাহিত্যের অংশবিশেষ। ইয়েটস তাঁর ব্যাকরণের বিষয় বিন্যাসে প্রায় সম্পূর্ণই নির্ভর করেছেন কেরীর ব্যাকরণের ওপর; তবে বাংলা ভাষার শুদ্ধতার ব্যাপারে তিনি কেরীর চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১)
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলা ভাষায় তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করা। বর্ণপরিচয় (১৮৫১) প্রকাশের আগ পর্যন্ত প্রথম শিক্ষার্থীদের জন্যে এ রকমের কোনো আদর্শ পাঠ্যপুস্তক ছিল না। তাঁর বর্ণপরিচয়ের মান এতো উন্নত ছিল যে, প্রকাশের পর থেকে অর্ধশতাব্দী পর্যন্ত এই গ্রন্থ বঙ্গদেশের সবার জন্যে পাঠ্য ছিলো। দেড়শো বছর পরেও এখনও এ গ্রন্থ মুদ্রিত হয়। বর্ণপরিচয়ের মতো সমান সাফল্য লাভ করেছিল বোধোদয় (১৮৫১), কথামালা (১৮৫৬), চরিতাবলী (১৮৫৬) এবং জীবনচরিত (১৮৫৯)। সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ও বর্ণপরিচয়ের মতো অভিনব— এর আগে বাংলা ভাষায় কোনো সংস্কৃত ব্যাকরণ ছিল না। চার খন্ডে লেখা ব্যাকরণ-কৌমুদীও (১৮৫৩-৬৩) তাঁর ব্যাকরণ রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান।
বাংলা গদ্যের সংস্কার এবং মান উন্নত করতে তিনি সমর্থ হয়েছিলেন। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পন্ডিতগণ এবং রামমোহন রায় যে বাংলা গদ্যরীতি নির্মাণ করেছিলেন, তা ছিল আড়ষ্ট, কৃত্রিম এবং কোনোমতে ভাব প্রকাশের উপযোগী। তাঁর আগেকার গদ্যে তথ্য প্রকাশের মতো শব্দাবলী ছিল কিন্তু তাতে এমন সৌন্দর্য, সাবলীলতা এবং গতির স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না, যাকে সাহিত্যিক গদ্য বলা যায় বা যা দিয়ে সাহিত্য রচনা করা যায়। ১৮৪৭ সালে বেতালপঞ্চবিংশতি প্রকাশের মাধ্যমে বিদ্যাসাগর তা পাল্টে দিলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের শব্দ-সাযুজ্য আবিষ্কার, বাক্য-কাঠামো সংস্কার, কর্তা ও ক্রিয়াপদ এবং ক্রিয়া ও কর্মের মধ্যে যথাযথ অন্বয় স্থাপন করে বাংলা গদ্যকে মাধুর্য দান করেন। তাছাড়া, শ্বাস-যতি ও অর্থ-যতির সমন্বয় ঘটান এবং পাঠক যাতে তা সহজেই দেখতে পান, তার জন্যে ইংরেজি রীতির যতিচিহ্ন, বিশেষ করে কমা, ব্যবহার করেন। তাঁর আগে একমাত্র অক্ষয়কুমার দত্তই ইংরেজি যতিচিহ্ন সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করেছিলেন।
জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন (১৮৫১-১৯৪১)
জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন ১৮৯৮ সালে ভারতীয় ভাষাগুলোর জরিপ শুরু করেন, যা তিনি ১৯২৭ সালে বই আকারে Linguistic Survey of India নামে ২০ খন্ডে প্রকাশ করেন। জরিপে তিনি ভারতবর্ষে প্রচলিত ১৭৯টি ভাষা আর ৫৪৪টি উপভাষার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, ব্যাকরণ, শব্দভান্ডার আর নমুনা উপস্থাপন করেন। ওই বইয়ের পঞ্চম খন্ডে আছে বাংলা ভাষাবিষয়ক আলোচনা। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক লোককথার সংগ্রহ ও রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার গতি-প্রকৃতিবিষয়ক আলোচনা। পরের বছর উক্ত পত্রিকারই ২য় খন্ড ৩য় সংখ্যায় তাঁর সংগৃহীত মানিকচন্দ্রের গান ইংরেজি অনুবাদসহ দেবনাগরী লিপিতে প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানি। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে শব্দতত্ত্ব (১৯০৯) , বাংলা ভাষা পরিচয় (১৯৩৮), বাংলা শব্দতত্ত্ব ইত্যাদি গ্রন্থে। ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা, মক্তব-মাদ্রাসার বাংলা ভাষা, হরপ্রসাদ সংবর্ধন, ভাষার কথা ইত্যাদি তার ভাষা বিষয়ক উল্লেখোগ্য প্রবন্ধ। বাংলাভাষা পরিচয় গ্রন্থে তিনি বাংলা ভাষার চলিত রূপের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কারণ তাঁর কাছে ভাষা হচ্ছে সচল সমাজমনের নিত্য প্রবহমান অভিব্যক্তি; আর এই অভিব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে চলিত ভাষায়। চলিত বাংলা রূপের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি একাধিকবার বলেছেন, বাংলা হচ্ছে ভঙ্গিপ্রধান ভাষা এবং এই ভঙ্গির পরিচয়ই তিনি ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব এই তিন দিক থেকে উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন।
তার ভাষা বিষয়ে প্রবন্ধ গুলো পড়তে ...
http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/4?subcatid=12&catId=6
বিজয়চন্দ্র মজুমদার (১৮৬১-১৯৪২)
The History of the Bengali Language (১৯২০) গ্রন্থে তিনিই প্রথম ঐতিহাসিকভাবে বাংলা ভাষায় বিদেশী উপাদানগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। এ গ্রন্থটি প্রকাশের পর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের Journal of the Department of Letters (Vol. III, ১৯২০)-এ ‘Outlines of an Historical Grammar of the Bengali Language’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেন, যা পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক ব্যাকরণ রচনার আদর্শ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৬৮-১৯২৯)
উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে বাংলা ব্যাকরণের রূপ ও প্রকৃতি নিয়ে যে তর্ক জমে ওঠে, ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তার মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। তাঁর ব্যাকরণ বিভীষিকা (১৯১১), সাধুভাষা বনাম চলিত ভাষা (১৯১৩), বানান-সমস্যা (১৯১৩), অনুপ্রাস (১৯১৩), ক-কারের অহংকার (১৯১৫) প্রভৃতি রচনা তাঁর ওই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।
প্রমথ চৌধুরী(১৮৬৮-১৯৪৬)
তিনি বাংলা গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তক। তাঁর সম্পাদিত সবুজ পত্র বাংলা সাহিত্যে চলতি ভাষারীতি প্রবর্তনে আগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯১৪ সালে মাসিক সবুজপত্র প্রকাশনা এবং তার মাধ্যমে বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। একে কেন্দ্র করে তখন একটি শক্তিশালী লেখকগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ(১৮৮৫-১৯৬৯)
বিভিন্ন ভাষায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র দখল ছিল অসাধারণ ও অসামান্য। তিনি ছোটবেলায় ঘরোয়া পরিবেশে উর্দু, ফারসি ও আরবি শেখেন এবং স্কুলে সংস্কৃত পড়েন। তিনি কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বি.এ (১৯১০) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ (১৯১২) পাস করেন। ১৯২৬ সালে শহীদুল্লাহ্ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইউরোপ যান। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বৈদিক ভাষা, বৌদ্ধ সংস্কৃত, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, তিববতি ও প্রাচীন পারসিক ভাষা এবং জার্মানির ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন খোতনি, প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষা শেখেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ফ্রান্স ও জার্মানিতে ধ্বনিতত্ত্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং কালানুক্রমিক-তুলনামূলক পদ্ধতিতে ভাষার ইতিহাস পুনর্গঠনে প্রয়োগ ঘটান। বলা যায় আধুনিক ধ্বনিতত্ত্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিনিই প্রথম বাঙালি।
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের তত্ত্বাবধানে শরৎচন্দ্র লাহিড়ী গবেষণা-সহকারী (১৯১৯-২১) হিসেবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে (১৯২১) যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা তাঁর জীবনের সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। এখানে শিক্ষাদান কালে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে মৌলিক গবেষণা করেন এবং ১৯২৫ সালে প্রমাণ করেন যে, গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। Buddhist Mystic Songs (১৯৬০) গ্রন্থটি চর্যাপদের অনুবাদ ও সম্পাদনা কর্ম। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় রচিত; এর ধর্মতত্ত্ব নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। এর আগে ১৯২৮ সালে তিনি চর্যাপদ বিষয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই ধ্বনিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমাও লাভ করেন এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ভাষা ও সাহিত্য (১৯৩১), বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৩৬), বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৫৯) ইত্যাদি তাঁর ভাষাবিষয়ক বই। তাঁর সম্পাদিত আঞ্চলিক ভাষার অভিধান(১৯৬৫) এক বিশেষ কীর্তি।
অধ্যাপনার বাইরে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ করাচির উর্দু ও উন্নয়ন সংস্থার উর্দু অভিধান প্রকল্প (১৯৫৯-৬০), ঢাকার বাংলা একাডেমীর পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্প (১৯৬০),বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান(১৯৭৪) এ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে শহীদুল্লাহ্ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম উর্দুর পরিবর্তে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবি জানান। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সম্পাদক (১৯১১) ছিলেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা ও সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭)
কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯১১ সালে ইংরেজিতে সম্মানসহ বি.এ শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ শ্রেণিতে ১ম স্থান অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে সংস্কৃতের শেষ পরীক্ষায় পাস করেন এবং প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি এবং জুবিলি গবেষণা পুরস্কার অর্জন করেন। কৃতিত্বের সাথে এম.এ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯১৯ সালে তিনি ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লন্ডনে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধ্বনিবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিল ইন্দো-আরিয়ান ফিললজি। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব ও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব ছাড়াও প্রাকৃত ভাষা, ফার্সি ভাষা, প্রাচীন আইরিশ ভাষা, পুরনো ইংরেজি ও গোথিক ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর লন্ডন থেকে তিনি প্যারিসে গমন করেন। সেখানে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লাভ ও ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাতত্ত্ব, প্রাচীন সগডিয়ান ও প্রাচীন খোতানি ভাষা, গ্রিক ও লাতিন ভাষার ইতিহাস এবং অস্ট্রো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়াটিক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯২২ সালে দেশে ফিরে আসার পর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের 'খয়রা' অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় কর্মজীবন শুরু করেন। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের বিশ্লেষণে প্রখ্যাত ইংরেজ ধ্বনিবিদ ড্যানিয়েল জোনসের ইংরেজি ভাষার ফোনিম নির্ণয়ের পদ্ধতি অনুসরণে শিষ্টকথ্য বাংলার ফোনিমগুলো নির্দেশ করেছিলেন।
তিনি লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ ফোনেটিক্স সায়েন্সের দ্বিতীয় অধিবেশনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও তিনি এশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগদান করেন এবং দেশবিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে বক্তৃতা দেন। করাচিতে সর্বভারতীয় হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে জাতীয় ভাষা বিষয়ে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ইউনেস্কোর ভাষাবিষয়ক সংবাদদাতা (১৯৭১) ছিলেন
সুনীতিকুমার ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৩৮০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত রচনা হলো দি অরিজিন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অব দি বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ (ওডিবিএল, ১৯২৬)। এই অদ্বিতীয় গবেষণা গ্রন্থে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা ভাষার উপাদানগুলো চিহ্নিত ও বিশ্লেষিত হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে বাঙালির মাতৃভাষা চর্চার যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে পরবর্তী অনেকের ভাষাচর্চার সৌধ। এটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তাঁর খ্যাতি দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘ভাষাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
বিগত শতকের ব্যাকরণগুলির ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। এটি স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ হলেও মূলত তাঁর ওডিবিএল অনুসরণেই রচিত। ফলে প্রচলিত ব্যাকরণ কাঠামো ভেঙ্গে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। সুনীতিকুমারই প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মগুলি নির্বিচারে গ্রহণ না করে ইতিহাস ও উপযোগিতার সূত্রে সেগুলিকে গ্রহণ-বর্জন করেছেন। এ ব্যাকরণে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষার জন্য কোনো নিয়ম প্রতিষ্ঠা ও নিয়ম আরোপ করা নয়, বরং ভাষার অন্তর্নিহিত নিয়ম আবিষ্কার ও তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা। বাংলা ব্যাকরণ রচনার এই দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় এখনও নতুন নতুন ব্যাকরণগ্রন্থ রচিত হচ্ছে, কিন্তু সেগুলির কোনোটিই নিরঙ্কুশ বাংলা ভাষার ব্যাকরণের মর্যাদা পায়নি; সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব এখনও অনেকাংশে রয়ে গেছে। ভাষাতত্ত্ব এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য তাঁকে এলাহাবাদ হিন্দু সাহিত্য সম্মেলন ‘সাহিত্য বাচস্পতি’ (১৯৪৮) এবং ভারত সরকার ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৬৩) উপাধিতে ভূষিত করে।
তাঁর ভাষাবিষয়ক অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: Bengali Phonetic Reader (১৯২৮), বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা (১৯২৯), ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা (১৯৪৪), সরল ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৪৫), Languages and Literatures of Modern India (১৯৬৩) ইত্যাদি।
সুনীতিকুমার সম্পর্কে আরো জানতে এ প্রবন্ধটি পড়া যেতে পারেঃ
https://www.kaliokalam.com/%E0%A6%86%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8B/
সুকুমার সেন (১৯০১-১৯৯২)
সুকুমার সেন ছিলেন একজন ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ। তিনিই সম্ভবত বাংলা ভাষার প্রথম সমাজ ভাষাবিজ্ঞানি। বৈদিক ও ধ্রুপদি সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, বাংলা, আবেস্তা ও প্রাচীন পারসিক ভাষায় তাঁর বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণতত্ত্ব আলোচনাতেও তিনি তাঁর বৈদগ্ধের পরিচয় রেখেছিলেন।
১৯২১ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃতে সাম্মানিক সহ প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫ সালে সিনট্যাক্স অফ বৈদিক প্রোজ নামে একটি থিসিস লিখে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ নোটস অফ দি ইউজ অফ কেসেস ইন দ্য কথক সংহিতা প্রকাশিত হয় এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে। এরপর মধ্য ও আধুনিক (বাংলা) আর্যভাষার ঐতিহাসিক পদবিচারের উপর গবেষণা করে তিনি পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
সুকুমার সেন মিথ-আশ্রিত ভাষাতত্ত্ব বা পুরাণচর্চার পরিবর্তে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি অবলম্বন করতেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, এশিয়াটিক সোসাইটি ও বর্ধমান সাহিত্য সভার প্রায় বারো হাজার পুঁথি পরীক্ষা করেছেন। জয়দেবের ''গীতগোবিন্দম্'' কাব্যের প্রাচীন পুঁথিটি তাঁরই আবিষ্কার। সেকশুভোদয়া পুঁথিটিও তিনি সম্পাদনা করেছেন। বাংলা ব্যাকরণের টেক্সট বইগুলির মধ্যে সুকুমার সেন রচিত ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৩৯) সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল : ভাষার ইতিবৃত্ত (বাংলা ভাষাতত্ত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা), Women's Dialect in Bengali (বাংলা মেয়েলি ভাষা নিয়ে গবেষণামূলক রচনা), বাংলা স্থাননাম (বাংলা স্থাননাম নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ), রামকথার প্রাক-ইতিহাস (রামায়ণ-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা), ভারত-কথার গ্রন্থিমোচন (মহাভারত-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা), A History of Brajabuli Literature (ব্রজবুলি সাহিত্যের ইতিহাস), বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (৫ট খণ্ডে, সুকুমার সেনের সবচেয়ে বিখ্যাত বই, বাংলা সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক ইতিহাস), বঙ্গভূমিকা (বাংলার আদি-ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থ), বাংলা ইসলামি সাহিত্য, The caste dialects of the Muchis in South-western Burdwan (১৯৬৫), লোক সাহিত্যের ভাষা(১৯৭০)। কলকাতা। বাংলা আকাদেমী, বাঙলার নারীর ভাষা(১৯৭৩) । কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ,
ভাষার ইতিবৃত্ত(১৯৯৩)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স,বাংলা সাহিত্য গদ্য(১৯৯৪)। কলকাতা। কলকাতা ইউনিভার্সিটি প্রেস ইত্যাদি।
মুহম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮২)
গবেষক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষণায় তিনি অন্যতম প্রধান পন্ডিত ব্যক্তি। স্কুলে পড়াশুনা শুরু করার আগেই এনামুল হক বাংলা, আরবি, উর্দু ও ফারসি ভাষা শেখেন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯২৫ সালে এফ.এ, ১৯২৭ সালে আরবিতে অর্নাসসহ বি.এ এবং ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্যদেশীয় ভাষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এ পাস করেন। এই কৃতিত্বের জন্য তিনি জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯২৯ হতে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেয়ে এনামুল হক অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণা করেন। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্ত্ত ছিল ‘History of Sufism in Bengal’। ১৯৩৫ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে সামান্য বেতনে Writers Building-এ অনুবাদকের কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পূর্ববাংলা স্কুল টেক্সট বুক বোর্ড এবং ১৯৫৬ সালে পূর্ববাংলা সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালেই তাঁকে নবগঠিত বাংলা একাডেমীর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ১৯৬১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৪-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড’এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ১৯৬৯-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে মুহম্মদ এনামুল হক বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেন। মুহম্মদ এনামুল হক মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস এবং বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ বিষয়ে দুরূহ গবেষণা কর্মে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এ কাজে তাঁর প্রেরণার উৎস ছিলেন সে যুগের তিন মনীষী, ড. দীনেশচন্দ্র সেন, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ। এনামুল হকের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য হলো সত্যানুসন্ধান ও বস্ত্তনিষ্ঠ গবেষণা। তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের লুপ্তপ্রায় পান্ডুলিপির সন্ধান দেন। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চেতনা জাগরণই তাঁর সাহিত্যসাধনার মূল প্রেরণা। সাহিত্যের ইতিহাস সন্ধানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।
তাঁর ভাষাবিষয়ক গ্রন্থগুলো হলঃ ব্যাকরণ মঞ্জরী রাজশাহী (১৯৫১), বাঙলা ভাষার সংস্কার (১৯৪৪), Perso-Arabic Elemants in Bengali (with GM Hilali, ১৯৬৭), চট্টগ্রামী বাংলার রহস্য ভেদ ইত্যাদি।
ড. মুহম্মদ আব্দুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯)
বাংলা ভাষার প্রধানতম ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। মুহম্মদ আবদুল হাই বাংলা ভাষায় বর্ণনামূলক ধ্বনিতাত্ত্বিক আলোচনার পথিকৃত। তিনি বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে সর্বোচ্চ সহজ সরলভাবে উদ্ভাসিত করেন।
আবদুল হাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-র প্রেরণায় ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে বিএ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় এবং ১৯৪২ সালে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৪৯ সালের ২রা মার্চ হাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৫০ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অভ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজে ভাষাতত্ত্বে গবেষণার জন্য যান।
সেখানে অধ্যাপক জে আর ফার্থের নির্দেশনায় বাংলার নাসিক্যধ্বনি এবং নাসিক্যভবন সম্পর্কে A Study of Nasals and Nasalization in Bengali শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করেন এবং ১৯৫২ সালে ডিস্টিংশনসহ এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বাংলা ধ্বনিমূলগুলো শনাক্ত করে ভাষায় ব্যবহারে ওই ধ্বনিমূলগুলোর মধ্যে যে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয় তার আলোচনাকে বিশ্লেষণে করেন। দেশে প্রত্যাবর্তন করে অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই Standard বা শিষ্ট কথ্য বাংলা ভাষার ধ্বনি এবং ধ্বনিতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণে ব্রতী হন এবং তাঁর গবেষণালব্ধ ফল ধ্বনি বিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৫) নামক গ্রন্থে প্রকাশ করেন। মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের এই গ্রন্থটি অদ্যাবধি বাংলা ভাষায় রচিত বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব পর্যালোচনার সর্বাধিক গভীর বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ। আবদুল হাই এ গ্রন্থে বাংলা স্বরধ্বনির সংখ্যা, দ্বি-স্বর এবং অর্ধস্বরের গঠন, ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোর ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিচয়, বাক্প্রবাহে ধ্বনির রীপ, সন্ধি ও সামগ্রিকীভবন, ধ্বনিগুণ এবং স্বরতরঙ্গ বিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন। এই বিশ্লেষণে বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে তিনি যে দৃষ্টান্তের পর্যালোচনা করেন, তার অজস্রতা ও ব্যাপকতা সত্যিই বিস্ময়কর। এতে বোঝা যায় যে, আলোচ্য গবেষণাটি যথার্থ ফিল্ডওয়ার্ক বা ক্ষেত্রীয় অনুসন্ধানের মাধ্যমে সম্পন্ন।
মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ধ্বনি বিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব বাংলা ভাষায় বাঙালির মুখের ভাষার Standard বা শিষ্ট রূপের প্রথম বিস্তৃত ফোনেটিক বিশ্লেষণ। এ গ্রন্থে যদিও তিনি মূলত উচ্চারণ স্থান ও উচ্চারণ রীতির মাপকাঠিতে কথ্য বাংলার ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু সে কাজে তিনি নকল তালু ও কাইমোগ্রাফ যন্ত্রের সহায়তা গ্রহণ করেন। শুধু বিচ্ছিন্ন ধ্বনি শনাক্তকরণ নয়, বাক্প্রবাহে বিভিন্ন অবস্থানে অন্যান্য ধ্বনির সংস্পর্শে তাদের যে রূপান্তর, তাও তিনি বিস্তৃতভাবে পর্যবেক্ষণ এবং ধ্বনিগুলোর সে বৈশিষ্ট্যকে ‘ধ্বনিগুণ’ শীর্ষক অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করেছেন। মুহম্মদ আবদুল হাই বাংলা ভাষায় প্রথম বাংলা ধ্বনিগুলোর ধ্বনিগুণের পরিমাপক, অধ্যাপক জে.আর ফার্থের ‘প্রসডিক’ পদ্ধতিতে তিনিই প্রথম বাংলা ধ্বনিগুলোর বিস্তৃত ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণকারী।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে প্রভাষক পদে ফিরে আসেন। ১৯৫৪ সালের ১৬ই নভেম্বর তিনি বিভাগের রিডার বা সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে রিডার থেকে প্রফেসর পদে তার উন্নতি ঘটে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন। আমেরিকার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ মাস মেয়াদে তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর ভাষাবিষয়ক গ্রন্থগুলো হলঃ
তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা (১৯৫৯), ভাষা ও সাহিত্য (১৯৬০), এ ফোনেটিক এন্ড ফোনোলোজিক্যাল স্টাডি অব ন্যাসালস্ এন্ড ন্যাসালাইজেশন ইন বেঙ্গলী (১৯৬০), ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৫) ইত্যাদি।
মুনির চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১)
মুনির চৌধুরী মূলত একজন সাহিত্যিক ও নাট্যকার। ১৯৪১ সালে মুনীর চৌধুরী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আই.এস.সি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বি.এ অনার্স (১৯৪৬) ও এমএ (১৯৪৭) পাস করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের পর অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক ভাষাতত্ত্বের প্রবর্তক লিওনার্ড ব্লুমফিল্ডের পদ্ধতির অনুসরণে অধ্যাপক চার্লস ফার্গুসনের সঙ্গে মিলিতভাবে বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের বিশ্লেষণ করেন। ফার্গুসন ও মুনীর চৌধুরীর বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব বিশ্লেষণ ফোনেমিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন, এই বিশ্লেষণে তাঁরা নতুনভাবে বাংলা অর্ধস্বরধ্বনি নির্ধারণ ও বিশ্লেষণ এবং প্রাগ স্কুলের স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য পদ্ধতি অবলম্বনে সর্বপ্রথমে বাংলা ধ্বনিগুলোর বৈপরীত্যসূচক বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু তাঁদের আলোচনা ছিল ইংরেজি ভাষায়। সুতরাং বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের এই অভিনব বিশ্লেষণটি বাংলাভাষী পাঠকদের জ্ঞানের বাইরে থেকে যায়। মুনীর চৌধুরী পরবর্তী সময়ে ‘বাংলা একাডেমী’ পত্রিকায় ‘সাহিত্য, সংখ্যাতত্ত্ব ও ভাষাতত্ত্ব’ বিষয়ে বাংলা ভাষায় প্রবন্ধ লিখলেও পূর্বোল্লিখিত প্রবন্ধের অনুবাদ বা ওই বিষয়ে বাংলায় কিছু লেখেননি।
১৯৬৯ সালে মুহম্মদ আবদুল হাই অকালে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর স্থানে মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে যান।
১৯৫৮ সালে প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা-সংস্কার কমিটির রিপোর্টের অবৈজ্ঞানিক ও সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তুর তীব্র সমালোচনা করে মুনীর চৌধুরী পূর্ববঙ্গের ভাষা কমিটির রিপোর্ট আলোচনা প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধ লেখেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলা বর্ণমালা ও বানান-পদ্ধতির সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে প্রবন্ধ লেখেন এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ক বিতর্কে সক্রিয় অংশ নেন।
তাঁর বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০) নামক গ্রন্থে বাংলা গদ্যের, বিশেষত পূর্ব বাংলার সমকালীন বাংলা গদ্যরীতির পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর একটি বিশেষ কীর্তি বাংলা টাইপ রাইটারের কি-বোর্ড (১৯৬৫) উদ্ভাবন, যা মুনীর অপটিমা নামে পরিচিত। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সহযোগে তিনি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ নামে একটি পাঠ্যপুস্তক লেখেন যা এখনো বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্যাকরণ বই।
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (১৯২৬-১৯৭১)
১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক-সম্মান পরীক্ষায় অংশ নেন ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৪৬-১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ে মাস্টার্স পড়া শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র-ভবনের বৃত্তি লাভ করে সেখানে ফিরে যান ও ১৯৪৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করে "সাহিত্যভারতী" উপাধি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।১৯৫৭ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এ ভাষাবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য বৃত্তি লাভ করেন। সেখানে দুই বছর গবেষণা করার পর কথ্য বাংলার শব্দের ছন্দোবিজ্ঞানের ওপর একটি অভিসন্দর্ভ লেখেন, কিন্তু তাঁর গবেষণার ধরন তৎকালীন মার্কিন ধারার ভাষাবৈজ্ঞানিক গবেষণাপন্থার অতিমাত্রায় অনুসারী ছিল বলে এই অভিসন্দর্ভটি প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়নি। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলা একাডেমি থেকে এটি প্রকাশ করা হয়।
Some Supra-Segmental Phonological Features of Bengali (1959), Colloquial Bengali (1963 and 1966), বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার (১৯৬২) ইত্যাদি তাঁর ভাষাবিষয়ক বই।
এছাড়াও জীবদ্দশায় তাঁর প্রচুর অপ্রকাশিত রচনা ছিল। এগুলো সাহিত্য-বিষয়ক গবেষণা, ব্যক্তিগত ও সৃষ্টিশীল রচনা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা, চিঠি ও ভাষাবিজ্ঞান - এ ছয়টি ভাগে ঢাকার বাংলা একাডেমি থেকে ভাষাবিজ্ঞানী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কর্তৃক সঙ্কলিত ও সম্পাদিত মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর রচনাবলী শিরোনামে তিন খণ্ডের বই আকারে ১৯৭৮, ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়।
কাজী দীন মুহম্মদ (১৯২৭-২০১১)
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার রূপসী গ্রামে ড. কাজী দীন মুহম্মদের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে বাংলা ভাষা গবেষণা ও উন্নয়নে, বাংলা ভাষায় প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
তিনি ঢাকা বশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভগের চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও একজন ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন সুপরিচিত।
কাজী দীন মুহম্মদ লন্ডনের SOAS-এ ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ভাষাতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন এবং বাংলা ব্যাকরণের ক্রিয়াবাচক পদের সংগঠনে ধ্বনিতাত্ত্বিক সূত্রসমূহ পরীক্ষা করেন। কাজী দীন মুহম্মদই প্রথম ব্যক্তি-যিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্গুইজটিকস এন্ড ফনিটিকস বিভাগে আধুনিক বর্ণনামূলক ভাষাতত্ত্বে বাংলা ভাষার ক্রিয়ারূপ নিয়ে গবেষণা করে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। এর পূর্বে ডক্টর সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উভয়েই তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে গবেষণা করে ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভটি ইংরেজি ভাষায় রচিত এবং The Verbal Structure in Colloquial Bengali(১৯৬১) নামে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ক্রিয়াপদ ও তার ধ্বনিতত্ত্ব বিষয়ক এই গবেষণাটি বাংলা ভাষায় এখনও রূপান্তরিত বা প্রকাশিত হয়নি। তবে বাংলা ক্রিয়াপদ, বাংলা ক্রিয়া : ব্যাকরণ সংক্রান্ত শ্রেণীবিভাগ এবং বাংলা ক্রিয়াপদের রূপ (১৯৬৫) এই তিনটি প্রবন্ধ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। তার অন্যান্য গ্রনথগুলো হলোঃ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ৪ খন্ড(১৯৬৮) , ভাষাতত্ত্ব(১৯৭১), সাহিত্য শিল্প(১৯৬৪), সাহিত্য সম্ভার(১৯৬৫), লোকসাহিত্যে ধাঁধা ও প্রবাদ(১৯৬৮), বর্ণমালা(১৯৭৪), প্রতিবর্ণায়ণ নির্দেশিকা(১৯৮২), The Phonological and Verbal Structure in Colloquial Bengali(১৯৮৫) ইত্যাদি।
রফিকুল ইসলাম(১৯৩৪-)
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-এন্ড আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে। তাঁর ভাষাবিষয়ক বইগুলো হলোঃ
ভাষাতত্ত্ব, An Introduction to Colloquial Bengali, বাংলা ভাষা আন্দোলন, ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধাবলী, বাংলা ব্যাকরণ সমীক্ষা; বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন, Bengali Graphemics (১৯৬০) ইত্যাদি।
পবিত্র সরকার(১৯৩৭-)
ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের সন্তান পবিত্র সরকার। উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। এরপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উচ্চশিক্ষা পর্ষদে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন ৬ বছর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ২৭ বছর। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত অন্তত ৬৪টি বই লিখেছেন। সম্পাদনা গ্রন্থসংখ্যা ৪৫টি।
গদ্যরীতি পদ্যরীতি(১৯৮৫)। কলকাতা। সাহিত্যলোক।
বাঙলা বানান সংস্কার : সমস্যা ও সম্ভাবনা(১৯৯২)। কলকাতা। চিরায়ত প্রকাশন।
বাংলা বলো(১৯৯২)। কলকাতা। প্রমা প্রকাশনী।
লোকভাষা লোকসংস্কৃতি(১৯৯৭) । কলকাতা। চিরায়ত প্রকাশন।
ভাষা, দেশ, কাল(১৯৯৮) । কলকাতা। মিত্র ও ঘোষ।
ছন্দতত্ত্ব ও ছন্দরূপ(১৯৯৯) । কলকাতা। চিরায়ত প্রকাশন।
ভাষাপ্রেম ভাষাবিরোধ(২০০৩)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
কথাসূত্র(২০০৫) । কলকাতা। মিত্র ও ঘোষ।
বাংলা ব্যাকরণ প্রসঙ্গ(২০০৬)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
বাংলা বলো(২০০৬)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
ভাষামনন ও বাঙালি মনীষা(২০০৬)। কলকাতা। পুনশ্চ প্রকাশন।
লোক ভাষা সংস্কৃতি নন্দনতত্ত্ব(২০১৭)। কলকাতা। চিরায়ত প্রকাশন।
পবিত্র সরকার ও গনেশ বসু (১৯৯৪) ভাষা-জিজ্ঞাসা। কলকাতা। বিদ্যাসাগর পুস্তক মন্দির।
পবিত্র সরকার, অমিতাভ মুখোপাধ্যায় ও প্রশান্তকুমার দাশগুপ্ত (১৯৯৭) (সংকলিত) আকাদেমি বানান অভিধান। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
বাংলা লেখার সহজপাঠ, স্কুল পকেট ডিকশনারি (বাংলা-ইংরাজি), The Generative Phonological Component of the Grammar of Bengali (১৯৭৫), পকেট বাংলা ব্যাকারণ, বাংলা গালাগালির ভাষাতত্ত্ব (১৯৭২), ইত্যাদি তাঁর ভাষাবিষয়ক বই।
সম্প্রতি তিনি ভাষাবিজ্ঞানি রফিকুল ইসলাম সহযোগে একটি একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ লেখেন যা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়।
আবুল কালাম মনজুর মোর্শেদ (১৯৩৮-)
বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় ভাষাতত্ত্ব-চর্চা রূপান্তরমূলক যুগে প্রবেশ করে সত্তর দশকে যখন আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে ভাষাতত্ত্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাংলাভাষা তত্ত্ব (১৯৭৫) নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সাধারণ পাঠককে পরিচিত করানোর প্রয়াস পান। আলোচ্য গ্রন্থে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব আলোচনায় সাংগঠনিক পদ্ধতি এবং শব্দতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব আলোচনার ক্ষেত্রে প্রধানত চমস্কি প্রবর্তিত পদ্ধতির প্রয়োগ করেন। বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় চমস্কির পদ্ধতি তিনিই প্রথম প্রয়োগ করার দাবিদার। ধ্বনিতত্ত্ব আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি কেনেথ এল পাইক এবং চার্লস হকেট আর শব্দতত্ত্ব বিষয়ে চমস্কির পদ্ধতি মূলত অনুসরণ করলেও হ্যারিস এবং বোলিনজার আদর্শের সহায়তাও গ্রহণ করেন। বাক্যতত্ত্ব আলোচনায় এ গ্রন্থে ফ্রিজের কথা স্মরণ রেখে চমস্কি পদ্ধতি গৃহীত হয়। আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং ‘বাংলা সম্বন্ধবাচক সর্বনাম’ সম্পর্কে গবেষণা করেন যা Relativization in Bengali (১৯৮৬) নামে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত।
এছাড়াও আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ আধুনিক ভাষাতত্ত্ব (১৯৮৫) নামে একটি বৃহদাকার গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এ গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়ে ভাষাতত্ত্বে বিভিন্ন শাখা ও পদ্ধতি, ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, ভাষার শ্রেণীবিন্যাস, উপভাষাতত্ত্ব লিখনরীতি, ভাষাতত্ত্ব-চর্চার ইতিহাস, ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব এবং বাগার্থতত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা রয়েছে। বাক্যতত্ত্ব অধ্যায়ে তার আলোচ্য বিষয়, প্রথাগত ব্যাকরণে বাক্যতত্ত্ব, সাংগঠনিক বা গঠনমূলক ব্যাকরণ বাক্যতত্ত্ব এবং রূপান্তরমূলক ব্যাকরণে বাক্যতত্ত্ব। এ গ্রন্থে বাংলা বাক্যতত্ত্ব ও রূপান্তরমূলক সূত্র প্রয়োগ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন, চলতি বাংলার বাক্যতত্ত্ব বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে চমস্কি প্রবর্তিত রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের সূত্র সম্পূর্ণ প্রয়োগযোগ্য নয়। চমস্কি কারক সম্পর্কে কোনো সূত্রের উল্লেখ করেননি। পরবর্তীকালে ফিলমোর (১৯৬০) যে সব ভাষায় বাক্যতত্ত্ব বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কারকের গুরুত্ব বিদ্যমান, কারক বিষয়ক নতুন সূত্রের ব্যবহার করে বাক্যতত্ত্ব বিশ্লেষণের নতুন সূত্র সংযোজন করেন। বাংলা বাক্যতত্ত্বে ব্যাকরণগত উপাদানের জটিলতার জন্যে রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের কয়েকটি সূত্রের পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন।
আবুল কালাম মনজুর মোরশেদের এডিনবরার গবেষণা কমিটির বাংলা রূপান্তর বাংলা সম্বন্ধবাচক সর্বনাম : গঠন ও প্রকৃতি (১৯৮৫) গ্রন্থে বাংলা সম্বন্ধবাচক সর্বনাম, সর্বনামীয় বাক্যাংশ এবং সম্বন্ধবাচকতা গঠনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। বিষয়বস্তু অনুসারে গ্রন্থটি দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত, প্রথম পর্যায়ে বাংলা সম্বন্ধবাচক সর্বনামীয় বাক্যাংশ গঠনের বিভিন্ন দিক এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে কয়েকটি রূপান্তরমূলক সূত্রের সাহায্যে বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিক গঠনের মধ্যে সম্বন্ধবাচক সর্বনাম যেভাবে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব, সে সম্পর্কে তত্ত্বগত দিকনির্দেশ। আবুল কালাম মনজুর মোরশেদের আলোচ্য বিষয়, বাংলা সম্বন্ধবাচক সর্বনাম, এই শ্রেণীর সর্বনাম দ্বারা গঠিত বাক্যাংশ, সম্বন্ধবাচক সর্বনাম ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বা আপেক্ষিক সর্বনাম জটিল বাক্যে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যেভাবে সর্বনামীয়করণ প্রক্রিয়া সাধিত হয়, তার বর্ণনা এবং রূপান্তরমূলক সূত্রের প্রয়োগে বাংলায় সর্বনামীয়করণের বিভিন্ন দিকের বিশ্লেষণ। বাংলা সম্বন্ধবাচক সর্বনাম বা সর্বনামীয় বাক্যাংশের ওপর তেমন বিস্তৃত আলোচনা ও তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা না থাকায়, আবুল কালাম মনজুর মোরশেদকে বিভিন্ন শ্রেণীর সর্বনামীয় বাক্যাংশ ও সূত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে তা উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ Standard বা শিষ্ট চলতি বাংলা ভাষার সঙ্গে নোয়াখালী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক ও বাক্য গঠনগত পার্থক্য নিরূপণে সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেও বাক্যতত্ত্বে চমস্কি পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব কিনা তা পরীক্ষা করেন এবং বাংলা ভাষার বাক্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ওই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর এ গ্রন্থটির নাম A Study of Standard Bengali and the Noakhali Dialect (১৯৮৫). তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলঃ
মনিরুজ্জামান (১৯৪০-)
ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৬০ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন ভারতের মাইশুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল Controlled Historical Reconstruction based on five Bengali Dialects. তিনি পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি প্রধান উপভাষার উপাদানের ভিত্তিতে পশ্চিম বাংলার ভাষার প্রত্নরূপ পুনর্গঠন এবং ভূ-চিত্র অঙ্কন করেন। তাঁর গবেষণা কমিটির বাংলা রূপান্তর এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে বাংলায় ভাষাতত্ত্ব অনুশীলন নামক তাঁর একটি প্রবন্ধ সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। এই সঙ্কলনে বাংলাদেশে ভাষা ও উপভাষাতত্ত্বের অনুশীলন, সংস্কৃত ও রুশ ভাষা : তুলনা, কুমিল্লা উপভাষায় ব্যক্তি সর্বনামরূপের ধ্বনিগঠন ও রূপমূল-সমস্যার বিকল্পতত্ত্ব প্রভৃতি ভাষাতত্ত্ববিষয়ক প্রবন্ধাবলী রয়েছে। মনিরুজ্জামান ভারতের উদয়নারায়ণ সিংহের সঙ্গে যৌথভাবে মাঠ পর্যায়ে একটি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেন, বিষয়টি ছিল Using Diglossic Style in Bengali in verying social contexts : A case study of Bangladesh Bengalees. এ গবেষণাকর্মটি ইংরেজি ভাষায় Diglossia in Bangladesh and language Planning (১৯৮৩) নামক গ্রন্থে প্রকাশিত। তবে এটি বাংলা ভাষায় এখনও রূপান্তরিত হয়নি।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সদ্যঅবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। কর্মজীবনের নানা সময়ে নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি এবং কলা অনুষদের ডিন ছিলেন। তিনি ‘লিঙ্গুইস্টিক সোসাইটি অভ ইন্ডিয়া’,‘ দ্রাবিড়িয়ান লিঙ্গুইস্টিক এসোসিয়েশান’, ‘ফিলোলজিক্যাল এসোসিয়েশান অভ গ্রেট ব্রিটেন’ সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা ও সংঘের জীবনসদস্য। ভাষা, সাহিত্য ও ফোকলোর বিষয়ে এযাবৎ তাঁর ২৭টি বই এবং শতাধিক গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।একাধিক সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
অন্যান্য গ্রন্থসমূহঃ
ভাষা সমস্যা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, উপভাষা চর্চার ভূমিকা, ভাষা আন্দোলন: শিক্ষায় ভাষা পরিকল্পনা, শিশুর ভাষা (১৯৭৬) ইত্যাদি
মনসুর মুসা (১৯৪৫-)
মনসুর মুসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি দীর্ঘকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে বিদেশিদের বাংলা পড়িয়েছেন। মনসুর মুসা ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ভাষাতত্ত্ব অধ্যায়ন করেছেন। মনসুর মুসার ভাষাতত্ত্ব-চর্চা সাধারণভাবে সমাজভাষাতত্ত্ব এবং বিশেষভাবে ভাষা পরিকল্পনা বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভূত। তিনি ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে সিংহলের ভাষাপরিকল্পনা নিয়ে এবং হাওয়াই ইস্টওয়েস্ট সেন্টারে সমাজভাষাতত্ত্ব তথা ভাষাপরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেন। সিংহলের ভাষা পরিকল্পনা বিষয়ক তাঁর অভিসন্দর্ভটি অদ্যাবধি বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে প্রকাশিত হয়নি। তবে সমাজভাষাতত্ত্ব বিষয়ে তাঁর দুটি গ্রন্থ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যার প্রথমটি ভাষা পরিকল্পনা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৪) এবং দ্বিতীয়টি বাঙলা পরিভাষা : ইতিহাস ও সমস্যা (১৯৮৫)। ভাষা পরিকল্পনা বিষয়ক গ্রন্থটিতে মনসুর মুসার যেসব প্রবন্ধ রয়েছে তার মধ্যে ভাষা পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক হলো : ‘বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতি’, ‘তুর্কী ভাষা আন্দোলন’, ‘ঔপনিবেশিক ভাষানীতি প্রসঙ্গে’, ‘ভাষা পরিকল্পনা’, ‘বাংলা ভাষা ও প্রশাসনিক নির্দেশ’, বাংলা প্রচলন সংক্রান্ত বিবেচনা’। মনসুর মুসার দ্বিতীয় গ্রন্থটি বাংলা পরিভাষার ইতিহাস ও সমস্যা বিষয়ক। এ গ্রন্থে তিনি পরিভাষার সমস্যা এবং বাংলা ভাষায় পরিভাষা প্রণেতাদের সংক্ষিপ্তভাবে পরিচয় দিয়েছেন । এ থেকে জানা যায় বাংলা ভাষায় পরিভাষা প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পথিকৃত ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’। তাঁর অন্যান্য ভাষাবিষয়ক গ্রন্থগুলো হলোঃ
Benglai As a Second Language: বাংলা আনন্দ পাঠ, প্রায়োগিক ভাষাতত্ত্বের রুপরেখা, বানানঃ বাংলা বর্ণমালা পরিচয় ও প্রতিবর্ণীকরণ, ভাষা পরিকল্পনার সমাজভাষাতত্ত্ব, বাংলা পরিভাষা ইতিহাস ও সমস্যা, শিক্ষাভাষা ও ভাষাশিক্ষা, পাণিনি, চমস্কি ও তারপর, বাঙলা ধ্বনিমূল, ভাষা পরিকল্পনা ও অন্যান্য প্রবন্ধ,ভাষাচিন্তা- প্রসঙ্গ ও পরিধি(২০০২) ইত্যাদি।
হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৬৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০-এর দশকে হুমায়ুন আজাদ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র তখন পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী চম্স্কি-উদ্ভাবিত 'সৃষ্টিশীল রূপান্তরমূলক ব্যাকরণ' (transformational-generative grammar (TGG)) তত্ত্বটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশে চমস্কি প্রবর্তিত ‘সৃষ্টিশীল রূপান্তরমূলক ব্যাকরণ’ এর সবচেয়ে উত্সাহী প্রবক্তা ও অন্যতম পথিকৃত তিনি। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য হুমায়ুন আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপমূলতত্ত্ব তথা বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষাবিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত করেন। তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল Pronominalization in Bengali (অর্থাৎ বাংলা সর্বনামীয়করণ)। পরবর্তীতে এটি একই শিরোনামের ইংরেজি বই আকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। । এ গ্রন্থে হুমায়ুন আজাদ ফিলমোর এর Case Grammer এবং চমস্কির Aspect-এর পরবর্তী মডেলের মিশ্র ভিত্তিতে গঠিত একটি কাঠামোতে বাংলা সর্বনাম প্রধান বাক্য গঠনের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেন।এসময়ে তিনি বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র (১৯৮৩) নামে আরেকটি বই লেখেন
হুমায়ুন আজাদ অবশ্য তার বিদেশে গবেষণার ফল দেশে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বাংলা ভাষায় বাক্যতত্ত্ব (১৯৮৫) নামে একখানি বড় গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেন। তাঁর এই গ্রন্থটি চমস্কি সূচিত ভাষাবিজ্ঞানের ধারণাকে বাংলা ভাষায় সংযোজিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রন্থটিতে তিনি বাক্য, প্রথাগত বাক্যতত্ত্ব, সাংগঠনিক বাক্যতত্ত্ব সম্পর্কে প্রথম তিনটি পরিচ্ছেদে বিশদ আলোচনার পর রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা এবং সেই তত্ত্ব বাংলা বিশেষ্য পদ এবং বাংলা সর্বনামীয়করণের ওপর প্রয়োগ করেছেন। পাঠকদের সুবিধার জন্য পরিশিষ্টে তিনি প্রথাগত ব্যাকরণ এবং সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞান সম্পর্কে দু’টি পরিচ্ছেদে আলোচনা রেখেছেন। গ্রন্থটি শেষ হয়েছে প্রথাগত, সাংগঠনিক ও রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণের তুলনার মধ্য দিয়ে। ‘বাক্যতত্ত্ব’ গ্রন্থে হুমায়ুন আজাদ মূলত বাংলা বিশেষ্যপদ এবং সর্বনাম সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, বাংলা ক্রিয়াপদ সম্পর্কে নয়।
হুমায়ুন আজাদ ‘প্রথাগত’, ‘সাংগঠনিক’ ও ‘রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ’-এর তুলনা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞান জন্মেছে প্রথাগত ব্যাকরণে প্রতিক্রিয়ায় এবং রূপান্তর ব্যাকরণ উদ্ভূত হয়েছে প্রথাগত ব্যাকরণে প্রেরণায় ও সাংগঠনিক প্রণালীর প্রতিক্রিয়ায়। সাংগঠনিকরা প্রথাগত ব্যাকরণকে সম্পূর্ণ বর্জন করেছিলেন : তাঁদের দৃষ্টিতে প্রথাগত ব্যাকরণ বিশৃঙ্খলা ও অবৈজ্ঞানিক। রূপান্তরমূলক ভাষা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রথাগত ব্যাকরণের চেয়েও দুর্বল সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞান, কেননা তা ভাষার সৃষ্টিশীলতায় বিশ্বাস না করে ভাষার খণ্ডাংশের বহিরঙ্গের বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। রূপান্তরবাদীরা সাংগঠনিক প্রণালী পরিত্যাগ করেছেন : তাঁদের বোধে সাংগঠনিক ব্যাকরণ ছদ্ম বৈজ্ঞানিক তা বিজ্ঞানের বহিরঙ্গের অনুকরণ করেছে মাত্র। রূপান্তর ব্যাকরণ পুনরায় যোগসূত্র রচনা করেছে প্রথাগত ব্যাকরণের সঙ্গে।।
একই সালে তিনি বাঙলা ভাষা শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত হয়। তিনি পরবর্তী কালে তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান ও অর্থবিজ্ঞানের উপর দু'টি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞান নামে একট প্রবন্ধ লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত অকাল মৃত্যুর কারণে তাঁর এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
উদয়নারায়ণ সিংহ(১৯৫১-)
একজন বহু-ভাষাবিদ, কবি, শিক্ষাবিদ, অনুবাদ তাত্ত্বিক, অভিধানকার ও ভাষাবিজ্ঞানি। তিনি ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেছেন। তিনি বাংলা ভাষায় ৩ টি কাব্যগ্রন্থ, ৬ টি সাহিত্য-প্রবন্ধ সংকলন এবং মৈথলি ভাষায় ৪ টি কাব্যগ্রন্থ ও ১১ টি নাটক লিখেছেন। এছাড়াও, তিনি ১৬ টি গ্রন্থ সম্পাদনাসহ বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন । সাম্প্রতিকালে তাঁর ELT (CUP) and Six bilingual Dictionaries (Longman) নামক দুটিগ্রন্থ এবং ভূত চতুর্দশী নামে একটি ভৌতিক কাহিনী সংকলন বেরিয়েছে। উদয় নারায়ণ সিংহ ভারতে ন্যাশনাল ট্রান্সলেশন মিশন ও ডেটা কনসর্টিয়াম ইন ইন্ডিয়ান ল্যাংগুয়েজ সহ অনেক প্রকল্পের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৬ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার এবং ২০০৯ সালে লন্ডন বইমেলায় তিনি একজন আমন্ত্রিত কবি ছিলেন। তিনি রবিন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলঃ
চর্যাবাক্যব্যবচ্ছেদবিষয়ক প্রস্তাব: ১ ক্রিয়াপদ(১৯৭৯) ,নোয়াম চমস্কি: সঞ্জননী ব্যাকরণবিপ্লব (১৯৮৩)
প্রবাল দাশগুপ্ত(১৯৫৩-)
রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে প্রবাল দাশগুপ্ত অন্যতম।
বইঃ হালের পশ্চিমী ব্যাকরণতত্ত্ব (১৯৭৪),ভাষার বিন্দুবিসর্গ, কথার ক্রিয়াকর্ম (১৯৮৭)
শিশির ভট্টাচার্য্য (১৯৬৩-)
জন্ম ৪ আগস্ট, ১৯৬৩, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানার কুমিরা গ্রামে। ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি (২০০৭) করেছেন কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্যারিসের সর্বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞানে এমফিল (১৯৯৫) ও এমএ (১৯৯৪) এবং ইন্ডোলজিতে এমএ (১৯৯৮) করেছেন। পোস্ট-ডক্টরেট গবেষণা টোকিওর রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউটে (২০০৮-১০)। ভাষা ও ব্যাকরণ বিষয়ে দেশি ও বিদেশি জার্নালে প্রায় ৪০টি প্রবন্ধ বেরিয়েছে।
আগ্রহের বিষয় ভাষা ও ব্যাকরণ, সাহিত্যের অনুবাদ, সমাজ, মহাকাব্য ও ইতিহাস। তাঁর দশটি পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে সঞ্জননী ব্যাকরণ (১৯৯৮), অন্তরঙ্গ ব্যাকরণ (২০১৩), জার্মানি থেকে প্রকাশিত Word Formation in Bengali: A Whole Word Morphological Description and its Theoretical Implications (২০০৭), বাংলা ব্যাকরণের রূপরেখা(২০১৭), বাংলা ভাষাঃ প্রকৃত সমস্যা ও পেশাদারি সমাধান, Basics of Language and Linguistics, ঈশ্বর ধর্ম বিশ্বাস, গুরু রজনীশের জীবন-দর্শন-কর্মের উপর ফরাসি ভাষায় রচিত পুস্তক Bhagwan et son monde orange (১৯৯১), ফরাসি কবি আপোলিন্যার (১৯৯০) ও র্যাঁবোর (১৯৯১, ২০১৩) কবিতার বঙ্গানুবাদ, জীবনানন্দের কবিতার ফরাসি অনুবাদ (১৯৯১), বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর রচিত ব্যার্নার হেনরি লেভির পুস্তকের বঙ্গানুবাদ বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হচ্ছিল (২০১৪) অন্যতম।
বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও অত্র ইন্সটিটিউটের ফরাসি ভাষা বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।
আরো জানতে..
নীলাদ্রিশেখর দাশ(১৯৬৭-)
ভাষাংশ ভাষাবিজ্ঞান (Corpus Linguistics) বিশেষজ্ঞ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট, কলকাতার অধ্যাপক। তিনি ভারত সরকারের অধীনে পরিচালিত কয়েকটি ভাষাবিষয়ক প্রকল্পের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বেশকয়েকটি ভাষাবিষয়ক জার্নাল সম্পাদনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৭ এবং ভাষাবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থগুলো হলঃ
বহুরূপী বাংলা বানান(২০০৬)। কলকাতা। দক্ষ ভারতী।
ভাষাংশসংগ্রহ ও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান(২০০৬)। দক্ষ ভারতী।
Corpus Linguistics and Language Technology: With Reference to Indian Languages(২০০৫)
Language Corpora and Applied Linguistics (২০০৭)
Rainbow of Linguistics: Vol-I, Vol-II (Eds.) (২০০৭)
Corpus Linguistics: An Introduction (২০০৮)
Corpus-Based Analysis of the Bangla Language (২০০৯)
Language Corpora: Past, Present, and Future (২০০৯)
Modern Bangla Script: An Introduction (২০১০)
Language and Linguistics (২০১১)
Applied Linguistics (২০১৩)
A Descriptive Study of Bangla Words (২০১৫)
The WordNet in Indian Languages (২০১৭)
তাঁর সমন্ধে আরো জানতে ...
https://sites.google.com/site/nsdashisi/home
দানিয়ুল হক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দানীউল হক হনলুলু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন এবং ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর কিছু বাংলা প্রবন্ধ এবং ভাষার কথা : ভাষাবিজ্ঞান (১৯৯০), ভাষাতত্ত্বের নানা প্রসঙ্গ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে
আজিজুল হক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আজিজুল হক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন এবং দেশে ফিরে ভাষাতত্ত্বের নতুন দিগন্ত (১৯৯০) নামে একটি পুস্তক প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে, ভাষা, ভাষাতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্বের কালান্তর, ভাষাতত্ত্বের নতুন দিগন্ত, সীমিত সূত্র ব্যাকরণ, বাক্যাংশ সংগঠন ব্যাকরণ, রূপান্তরিক ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্বের সাম্প্রতিক প্রগতি এবং প্রকৃতি, ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দার্থতত্ত্ব, ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্ব এবং অসামাজিক ভাষাতত্ত্ব।
রামেশ্বর শ্ব’
বইঃ সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা (১৯৮৪)
রাজীব হুমায়ুন
রাজীব হুমায়ুন ভাষাতত্ত্বে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন ডেকান কলেজ, পুনেতে। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল Descriptive Analysis of Sandipi in its Socio-Cultural Context. এই গবেষণাকর্মটির একটি বাংলা সংস্করণ ‘সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। রাজীব হুমায়ুন শিষ্ট কথ্য বাংলার সঙ্গে সন্দ্বীপের উপভাষার তুলনা এবং সন্দ্বীপী উপভাষার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নির্দেশ করার প্রয়াস পান।
তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলঃ সমাজ ভাষাবিজ্ঞান (১৯৯৩)
আফিয়া দিল
যুক্তরাষ্ট্রের এলিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক
বইঃ Hindu-Muslim Dialects in Bengali (১৯৭২)
আনোয়ার এস দিল
যুক্তরাষ্ট্রের এলিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক
অখিলেশ ভট্টাচার্য
মোদের গরব, মোদের আশা(১৯৯৫)
অজিত রায়
ছোটলোকের শব্দলোক (২০০৪)। শহর পত্রিকা। ধানবাদ। ঝাড়খণ্ড।
অজয় দাশগুপ্ত ও মৃণালকান্তি দাশ
বাংলায় অতিথি শব্দের অভিধান(২০০৬) । কলকাতা। পুনশ্চ।
অঞ্জন সেন ও উদয় নারায়ণ সিংহ (সম্পা)
কবিতার ভাষা(২০১২)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, ১৫০ ৷
অতুল সুর
বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন(২০০১)। কলকাতা। সাহিত্যলোক।
অধীর কুমার সরকার ও মীর রেজাউল করিম
বরিন্দ অঞ্চলের ভাষা ও শব্দকোষ(২০১৩)। কলকাতা । বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ ৷ দাম ১৫০ টাকা
অনির্বাণ মান্না
স্ল্যাং, সাম্প্রতিক কবিতায়(২০১৫)। ছোঁয়া, শেওড়াফুলি। দাম ১৫০ টাকা।
অনিমেশকান্তি পাল
ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা(২০০৪)। কলকাতা। বামা পুস্তকালয়।
অনিমেশকান্তি পাল
বাংলা ভাষা : পুব-পশ্চিম(২০১০)। কলকাতা। এবং মুশায়েরা।
অপূর্ব সাহা
বাংলা বানান : চাপান উতোর(সম্পাদিত) (২০০৪)। থির বিজুরি পত্রিকা।
অপূর্বকুমার রায়
উনিশ শতকের বাংলা গদ্য সাহিত্য : ইংরেজি প্রভাব(১৯৮৯)। কলকাতা। জিজ্ঞাসা প্রকাশনী।
শৈলিবিজ্ঞান(২০০৬)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
অভ্র বসু
শব্দগল্পদ্রুম (বাংলা ব্যুতপত্তি অভিধান) ( ২০১৫)। কলকাতা। গাঙচিল।
বাংলা স্ল্যাং : সমীক্ষা ও অভিধান(২০০৫) । কলকাত। প্যাপিরাস।
অভিজিত মজুমদার
শৈলিবিজ্ঞান ও আধুনিক সাহিত্যতত্ত্ব(২০০৭)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
অভীক গঙ্গোপাধ্যায়
ভাষার মৃত্য : লুপ্ত ও মৃত ভাষার খোঁজ(২০১২)। কলকাতা। ভাষাবন্ধন।
অমিতাভ বিশ্বাস
মাতৃভাষা দিবস : স্বরূপ সন্ধান(২০১২)। কলকাতা। পাণ্ডুলিপি প্রকাশন।
অমিতাভ মুখোপাধ্যায়
সহজ বাংলা অভিধান(২০০৫)। কলকাতা। মিত্র ও ঘোষ।
অমিয় বন্ধু সিংহ
বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিকথা : ষোড়শ-বিংশ শতাব্দী(২০১৩)। কলকাতা। প্রজ্ঞা বিকাশ।
অমৃত রেণু ঘোষ
ইংরেজি কি ও কেন(২০১৩)। কলকাতা। প্রয়াগ প্রকাশনী।
অমল পাল
কথার আড়ালে কথা(২০১২)। কলকাতা। লালমাটি।
বাংলা কবিতার ছন্দ(২০১২)। কলকাতা। লালমাটি।
অরুণ সেন
বাঙলা বানানের অভিধান : বাঙলা বানান ও বিকল্প বর্জন-একটি প্রস্তাব(১৯৯৩)। কলকাতা। প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস।
অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
বাংলা গদ্যরীতির ইতিহাস(২০০০) । কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
দুশ বছরের পুরানো বাংলা গদ্য পুঁথি(সম্পাদিত) (১৯৭৯) । কলকাতা। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
অলিভা দাক্ষী
বাংলা ভাষাবিজ্ঞান অভিধান(২০০৩)। কলকাতা। সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার।
অশোককুমার দে
ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব : একটি মূল্যায়ন(১৯৯৫)। কলকাতা। ত্রিদীপ প্রকাশনী।
অশোককুমার মুখোপাধ্যায়
সংসদ বানান অভিধান(১৯৯৮) । কলকাতা। সাহিত্য সংসদ।
অসিত দাস
নামের ফেরে(২০১৫) । আহরণ। কলকাতা।
অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধান (সম্পাদিত) (১৯৯১) । প্রথম খণ্ড। কলকাতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
আজিজুল হক
আধনিক ভাষা তত্ত্বের স্বরূপ ও প্রযুক্তি
আজিজুল হক মণ্ডল
বাংলা প্রবাদ বহুকৌণিক দৃষ্টি(২০১৩)। কলকাতা ৷ বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ ৷
বাংলা ধাঁধা : বহুকৌণিক দৃষ্টি(২০১৫)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ।
আশিস খাস্তগীর
বাংলা গদ্যে নীতিশিক্ষা(২০০৫)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
আশিসকুমার দে
সাহিত্যালোচনা ও শৈলীবিজ্ঞান(১৯৯২) । কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
আহমদ কবীর
আমিনুল ইসলাম
বইঃ A phonetic study of inter-word relations in Bengali (১৯৬১)
ইন্দ্রজিৎ সরকার
বাংলা শব্দের উতস সন্ধানে(২০১৫)। কলকাতা। তুহিনা প্রকাশনী।
ইন্দ্রজিত সরকার
দেবভাষা তরঙ্গিনী(২০১৫)। কলকাতা। তুহিনা প্রকাশনী।
উজ্জ্বলকুমার দে
রবীন্দ্রকবিতা : ভাষারীতিগত পর্যবেক্ষণ(২০০৬)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
উদয়কুমার চক্রবর্তী
বাংলা সংবর্তনী ব্যাকরণ(১৯৯৮)। কলকাতা। শ্রী অরবিন্দ পাবলিকেশন।
বাংলা পদগুচ্ছের সংগঠন(২০০৪)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
ক্ষুদিরাম দাস
বানান বানানোর বন্দরে(১৯৯৩)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
বাংলা-সাঁওতালি অভিধান(১৯৯৮)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
কামিনীকুমার রায়
লৌকিক শব্দকোষ(১৯৭০)। কলকাতা। লোকভারতী।
কালীন্দ্রনাথ বর্মণ
রাজবংশী অভিধানষ(১৯৭০)। শিলিগুড়ি। তিস্তাপক্ষ।
কমল কুমার পাল
বাংলা প্রবাদের গঠন ও উত্স কথা(২০১৫)। কলকাতা। নান্দনিক।
কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্য
ডুয়ার্সের লোকায়ত শব্দকোষ(১৯৯০) । শিলিগুড়ি। তিস্তাপক্ষ।
কিংশুক রুদ্র
শিল্প-সাহিত্যের শব্দার্থকোষ(২০১২)। কলকাতা। অঞ্জলি পাবলিশার্স।
গুলশান আরা
গোলোকেন্দপ ঘোষ
সংসদ বিজ্ঞান পরিভাষাকোষ(১৯৯৩)। কলকাতা। সাহিত্য সংসদ।
গৌতম মুখোপাধ্যায়
সীমান্ত বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের লোকসাহিত্যে লোকজীবন(২০১৫)। কলকাতা। অক্ষর প্রকাশনী।
গৌতমকুমার দে
বাহনলিপি(২০১১)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য
বাংলা উচ্চারণের সহজ পাঠ(২০০৫)। কলকাতা। যোগমায়া প্রকাশনী।
স্বর ও বাকরীতি(২০০৬)। কলকাতা। সাহিত্যলোক।
চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধায়
দুই শতকের বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশন (সম্পাদিত) (১৯৮১) । কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
চিত্তরঞ্জন মাইতি
বাংলা নামকরণ অভিধান(২০০৫)। কলকাতা। গাঙচিল।
চিত্রা দেব
পুঁথিপত্রের আঙিনায় সমাজের আল্পনা(১৯৮১)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস
বাঙ্গালা ভাষার অভিধান(১৯৭০)। দুই খণ্ড। কলকাতা। ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস।
জগদীশ চন্দ্র ঘোষ
আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ
জন্মজিত রায়
শ্রীহট্ট কাছাড়ের ভাষা : সাহিত্য ও সমাজ(২০১৩)। আগরতলা। অক্ষর পাবলিকেশনস।
জামিল চৌধুরী
বানান ও উচ্চারণ(১৯৯০)। ঢাকা। বাংলা একাডেমী।
বাঙলা একাডেমী বাঙলা বানান অভিধান(১৯৯৪)। বাংলা একাডেমী।
জাহিরুল হাসান
মুসলমানকোষ(২০১২)। কলকাতা। পূর্বা।
জিনাত ইমতিয়াজ আলী
জ্যোতিভূষণ চাকী
বাঙলা ভাষার ব্যাকরণ(১৯৯৬)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
জ্যাক এ ড্যাবস
বইঃ পূর্ববঙ্গ উপভাষা (১৯৬৫)
জুল ব্লখ
ভারতীয় আর্য ভাষা (অনুবাদ: মৃণাল নাথ) (২০১৩)। কলকাতা। এবং মুশায়েরা।
তপন মণ্ডল
চর্যাপদ পুনর্মুল্যায়ন(সম্পাদিত) (২০১৫)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ।
তহমিনা খাতুন ও প্রবীর দে
মায়ের ভাষা(সম্পাদিত) (২০০৬)। কলকাতা। এম. পি. পাবলিশার্স।
তন্ময় ভট্টাচার্য
তাপস ভৌমিক
অভিধান সংখ্যা(সম্পাদিত) (১৯৯৯)। কলকাতা। কোরক সাহিত্য পত্রিকা।
বিষয় : বাংলা ভাষা(সম্পাদিত) (২০০৩)। কলকাতা। কোরক সাহিত্য পত্রিকা।
তারকনাথ ভট্টাচার্য
গবেষণা – তথ্য ও প্রয়োগ(২০১২)। কলকাতা। প্রজ্ঞাবিকাশ।
ত্রিপুরা বসু
মানুষ কী করে লিখতে শিখল(২০১২)। আগরতলা। বুক ওয়ার্ল্ড।
দেবীপ্রসাদ দে
অজানাকে জানার শব্দাবিধান(২০১৫)। আনন্দ প্রকাশন, কলকাতা।
দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু
বইঃ বাংলা ভাষার আধুনিক তত্ত্ব ও ইতিকথা
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর
উপসর্গের অর্থবিচার(১৯৭৯)। কলকাতা। জিজ্ঞাসা।
দিলীপকুমার মিত্র
উদ্ধৃতি অভিধান(২০০৫)। কলকাতা। পারুল প্রকাশনী।
দীননাথ সেন
বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে(২০০৬)। কলকাতা। কৌরব প্রকাশন।
দীপঙ্কর ঘোষ
ভাষা-ভাবনা : উনিশ-বিশ শতক(সম্পাদিক) (২০০৭)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
দীপঙ্কর সেন
মুদ্রণচর্চা(১৯৯৩)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
দেবপ্রসাদ ঘোষ
বাংসা ভাষা ও বানান(১৯৫৩)। কলকাতা। মডার্ন বুক এজেন্সি।
দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলার মুখ ও শুয়োরের মাংস(সম্পাদিত) (২০০৪) । কলকাত। অবভাস।
ধনঞ্জয় রায়
উত্তরবঙ্গের লোকজীবনচর্চা(২০১৫)। ভোলানাথ প্রকাশনী, কলকাতা - ৯
ধীমান দাশগুপ্ত
গদ্যগঠন(২০০৬)। কলকাতা। বানীশিল্প।
নরেন বিশ্বাস
বাংলা উচ্চারণ অভিধান
নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
বইঃ খুলনা জেলার মাঝির ভাষা (১৯২৪)
নন্দদুলাল ভট্টাচার্য
বিচ্ছিরি শব্দের অভিধান(২০০২)। কলকাতা। রানার প্রকাশন।
নোরিহিকো উচিদা
বইঃ চট্টগ্রামী উপভাষা (১৯৬৯)
নিতাই জানা
দক্ষিণ-পশ্চিম বাঙ্গালা ভাষা(২০১৭)। কলকাতা। দি সী বুক এজেন্সী।
নির্মল দাশ
উত্তরবঙ্গের ভাষা প্রসঙ্গ(১৯৯৭)। কলকাতা। ওরিয়েন্টাল বুক কোম্পানি।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ(২০০০)। কলকাতা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
ভাষাপরিচ্ছেদ(২০০৬) । কলকাতা। সাহিত্যলোক।
উত্তরবঙ্গের নারীর ভাষা (১৯৭০)
নীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ(১৯৯৫)। কলকাতা। রূপা পাবলিকেশনস।
নীতিশ বিশ্বাস
সময়ের শব্দমালা(২০০৬)। কলকাতা। ঐকতান গবেষণা পত্র।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
বাঙলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন(সম্পাদিত) (১৯৯৪)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
নেপাল মজুমদার
বানান বিতর্ক(সম্পাদিত) (১৯৯২)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
পৃথ্বীশ চক্রবর্তী
বইঃ Dialects of Ranakamars of Birbhum (১৯৬৫)
প্রণবেশ মাইতি
ভাষাদিবস(২০০৫)। কলকাতা। গাঙচিল।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ
চলতি ভাষার বানান(১৯২৫)। প্রবাসী। অগ্রহায়ণ।
পার্বতীচরণ ভট্টাচার্য
শব্দের জগত(১৯৮০)। কলকাতা। জিজ্ঞাসা এজেন্সিজ।
বাংলাভাষা(১৯৯৮)। কলকাতা। জিজ্ঞাসা এজেন্সিজ।
পরেশচন্দ্র মজুমদার
বাংলা ভাষা পরিক্রমা(১৯৯৩)। দুই খণ্ড। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার ক্রমবিকাশ(১৯৯৪)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
আধুনিক ভারতীয় ভাষা প্রসঙ্গে(১৯৯৫)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
বাঙলা বানানবিধি(১৯৯৮)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
ভাষা ও সংস্কৃতি, স্মৃতি সমীক্ষা মূল্যায়ন(২০১২)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং
পরমেশ আচার্য
বাঙালির শিক্ষাচিন্তা (২০১২)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং
পলাশবরণ পাল
ধ্বনিমালা বর্ণমালা(২০০১)। কলকাতা। প্যাপিরাস।
ফাদার দাতিয়েন
গদ্য পরম্পরা(২০১২)। কলকাতা। গাঙচিল।
ফণিভূষণ আচার্য
বাংলা বানা বিচিন্তা(১৯৯৬)। কলকাতা। বিকাশ গ্রন্থ ভবন।
বামনদেব চক্রবর্তী
উচ্চতর বাঙলা ব্যাকরণ(১৯৭৪)। কলকাতা। সরকার বুক।
বাসুদেব মুখোপাধ্যায়
মনোবিদ্যার অভিধান(২০১১) । কলকাতা। পাভলভ ইন্সটিটিউট।
বাসুদেব হালদার
অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা, ভাষাশৈলী(২০১৩)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
বিকাশ পাল
প্রসঙ্গ লোকক্রিড়া(২০১২)। কলকাতা। জ্ঞানবিচিত্রা।
বিজিতকুমার দত্ত, পবিত্র সরকার, জ্যোতিভূষণ চাকি, সুবোধরঞ্জন রায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, সনতকুমার চট্টোপাধ্যায়, ও নৃপেন্দ্র সাহা (১৯৯৯) আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
বিজনবিহারী ভট্টাচার্য
বঙ্গভাষা ও বঙ্গসংস্কৃতি(১৯৮৫)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
বিজয় কবিরাজ
বাংলা বাগধারা প্রসঙ্গ প্রয়োগ(২০০৫) । কলকাতা। পুনশ্চ প্রকাশন।
শব্দমাধুরী(২০০৫)। কলকাতা। পুনশ্চ প্রকাশন।
বিদ্যুত্ বরণ চৌধুরী
ভাষাপ্রযুক্তির কয়েকটি(২০১২)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
বিপ্লব চক্রবর্তী
শৈলী : চিন্তাচর্চা(সম্পাদিত) (২০০৩)। কলকাতা। রত্নাবলী প্রকাশনী।
বিভাবসু দত্ত
বিদ্যাসাগরের গদ্যশৈলী(২০০৬) । কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
বিদ্যাসাগরের গদ্যশৈলী (২০১৩)৷ কলকাতা ৷ বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ ৷
বীতশোক ভট্টাচার্য
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অভিধান(২০০৬)। কলকাতা। বানীশিল্প।
বদিউর রহমান
সাহিত্য সংজ্ঞা অভিধান(২০১২)। কলকাতা। বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন।
বলাইচাঁদ হালদার
ডায়মন্ড হারবার অঞ্চলের বাংলা উপভাষা(২০০২)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক
অপরাধ জগতের ভাষা ও শব্দকোষ(১৯৯৩)। কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক ও টি. নারা
গীতাঞ্জলি : ভাষাতাত্ত্বিক সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ(সম্পাদিত) (১৯৯৪)। কলকাতা। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট।
সভ্যতার সংকট : ভাষাতাত্ত্বিক সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ(সম্পাদিত) (১৯৯৬)। কলকাতা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
শেষ লেখা : ভাষাতাত্ত্বিক সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ(সম্পাদিত) (২০০০)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
ভব রায়
রাঢ়ের লোকভাষা ও শব্দকোষ(২০০১) । কলকাতা। দীপায়ন।
মানসকুমার রায়চৌধুরী
বাংলা অশিষ্ট শব্দের অভিধান(সম্পাদিত) (২০০১)। কলকাতা। অভিজাত প্রকাশনী।
মাহববুল হক
বাঙলা বানানের নিয়ম(১৯৯৫)। ঢাকা। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী।
মিতালি ভট্টাচার্য
বাংলা বানান চিন্তার বিবর্তন(২০০৬)। কলকাতা। পারুল প্রকাশনী।
মোহাম্মদ আবুল কাইউম
১.অভিধান ও ২.পান্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ সমালোচনা
মুরারী মোহন সেন
ভাষার কথা
মৃণাল নাথ
বইঃ সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের রূপরেখা (১৯৮৯)
মঞ্জুলী ঘোষ
মির রেজাউল করিম
শেরসাবাদিয়া সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি(২০০১)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
মির রেজাউল করিম ও তন্ময় মিত্র
পুথি গবেষণার সহজ পাঠ(২০১২)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ।
মোশাররফ হোসেন ভুঞা
ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান(২০১৫)। ঢাকা । ঐতিহ্য।
মৃণাল নাথ
সমাজভাষাবিজ্ঞানের রূপরেখা(১৯৮৯)। ঢাকা। বাংলাদেশ ভাষা সমিতি।
ভাষা ও সমাজ(১৯৯৯)। কলকাতা। নয়া উদ্যোগ।
মৃদুলকান্তি বসু
নতুন বাঙলা বানান(২০০২)। কলকাতা। মাদার পাবলিশিং।
মন্টু বিশ্বাস
সুন্দরবনের লোককথা(২০১২)। কলকাতা। অক্ষর প্রকাশনী।
মনীন্দ্রকুমার ঘোষ
বাঙলা বানান(১৯৯৪)। কলকাতা। দেজ পাবলিশার্স।
মহম্মদ হাবিবুর রহমান
(২০০৫) শিক্ষাকোষ। ঢাকা। এডুকেশন প্রোজেক্ট।
রাজশেখর বসু
(১৯৬২) চলন্তিকা - আধুনিক বাংলা ভাষার অভিধান। কলকাতা । এম. সি. সরকার।
রজত পাল
(২০১৫) আর্য দিগন্তে সিন্ধু সভ্যতা। কলকাতা । তুহিনা প্রকাশনী।
রণজিত পুরকায়স্থ
(২০১২) ভারতীয় ভেসজ। কলকাতা। ভিকি পাবলিশার্স।
রতিকান্ত ত্রিপাঠী
(২০১২) প্রাচীন বাংলার শিলা ও তাম্রলিপিতে সমাজ ও সংস্কৃতি। কলকাতা। দে পাবলিকেশনস।
রতন বিশ্বাস
(সম্পাদনা) (২০১৭) উত্তরবঙ্গের ভাষা ও স্থাননাম (আঞ্চলিক শব্দকোষ সহ)। কলকাতা। অমর ভারতী।
রতনকুমার নন্দী
(২০১৩) বঙ্কিম অভিধান (উপন্যাস খণ্ড)। কাঁটালপাড়া, নৈহাটি। বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র।
রতনকুমার বিশ্বাস
(সম্পাদিত) (২০১৩) লোকসঙ্গীতের চরাচর। কলকাতা। একুশ শতক।
রবি চক্রবর্তী ও কলিম খান
(২০০৫) বাংলা বানান বাংলা ভাষা। কলকাতা। কৌরব প্রকাশনী।
রমাপ্রসাদ দাস
ভাষার বনিয়াদ : কিছু প্রসঙ্গ(২০০০)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
কথার কর্ম ও অপকর্ম(২০০২) । কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
রমাপ্রসাদ দে
ভাষাতাত্ত্বিক পবিত্র সরকার(২০১৫)। কলকাতা। সংস্কার।
রমেন ভট্টাচার্য
বাঙলা বানানের নিয়ম ও অনিয়ম(১৯৯৭) । কলকাতা। সাহিত্য সংসদ।
রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী
শব্দ কথা
লিপিকা সাহা
ভাষানীতি ভাষাপরিকল্পনা(২০১৫)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ।
শাজাহান মনির
বাঙ্গালা ব্যাকরণ
শ্যামশ্রী বিশ্বাস সেনগুপ্ত
বহুরূপে ভাষা, প্রয়োগের বাংলা ব্যবহারের বাংলা(২০১৫) । কলকাতা। প্রতিভাস।
শিবপ্রসন্ন লাহিড়ি
সিলেটী ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা(১৯৭৫) । ঢাকা । বাংলা একাডেমী।
শিবপ্রসন্ন লাহিড়ি, আহমত শরীফ, দিল্লুর রহমান, আব্দুল কাইউম, আনিসুজ্জামান (২০০৫) বাংলা ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ। ঢাকা। বাংলা একাডেমী।
শিশিরকুমার দাশ
ভাষা জিজ্ঞাসা(১৯৯৪)। কলকাতা। চিরায়ত প্রকাশন।
মোদের গরব মোদের আশা(১৯৯৯)। কলকাতা। চিরায়ত প্রকাশন।
শৈলেন্দ্র বিশ্বাস
সংসদ বাংলা অভিধান(১৯৭১)। কলকাতা। সাহিত্য সংসদ।
শৌরীন্দ্রকুমার ঘোষ
বাঙালি জাতি পরিচয়(২০০৬)। কলকাতা। সাহিত্যলোক।
শন্তনু ঘোষ
হস্তীপুরাণ(২০১৫)। কলকাতা । আনন্দ পাবলিশার্স।
শর্মিলা বসুদত্ত
বাংলায় মেয়েদের ভাষা(২০০০)। কলকাতা। প্রমা প্রকাশনী।
সমীর ঘোষ
সত্রাজিৎ গোস্বামী
বইঃ বাংলা অকথ্য ভাষা ও শব্দকোষ (২০০০)
সুকুমার বিশ্বাস
সুকুমার পাল
বাংলা ব্যক্তিনাম অভিধান(২০০৬)। কলকাতা। ডি.এম. লাইব্রেরী।
সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আধুনিক বাংলা ভাষাতত্ত্ব(২০০৫)। কলকাতা। প্যাপিরাস।
সুহাস চট্টোপাধ্যায়
সোমশঙ্কর রায়
আফ্রিকার লোককথা(২০১২)। কলকাতা। মনফকিরা।
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ
সৌরভ সিকদার
বানান অভিধান ও বাঙলা বানানের নিয়ম(১৯৯৯) । ঢাকা। অনন্যা প্রকাশন।
সঞ্জীব সাহা
ধর্মীয় উদ্ভিদ লোককথা, সংস্কৃতি ও আধুনিক বিজ্ঞান(২০১৩)। কলকাতা। কানন প্রকাশনী।
সঞ্জয় প্রামাণিক
প্রসঙ্গ মধ্যযুগ : বাউল গানের তত্ত্বকথা এবং ভাষা(২০১২)। কলকাতা। অক্ষর প্রকাশনী
সত্যনারায়ণ দাস
বীরভূমের ভাষা ও শব্দকোষ(১৯৮৮)। কলকাতা। সারস্বত লাইব্রেরী।
সত্রাজিত গোস্বামী
বাংলা অকথ্য ভাষা ও শব্দকোষ(২০০০)। কলকাতা। জয়দুর্গা লাইব্রেরী।
সুদীপ্ত বসু
শরীরের ভাষা(২০১২)। কলকাতা। দে পাবলিকেশনস্।
সুধীর চক্রবর্তী
গবেষণার অন্দর-বাহির(২০১১)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঙালির ভাষাচিন্তা (সম্পাদিত) (২০০২) । কলকাতা । প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স।
সুনীতি চক্রবর্তী
অটিজম : আমাদের অ-সাধারণ শিশুরা(২০১২)। কলকাতা। আনন্দ।
সুনীতিমোহন বিশ্বাস
বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস(২০১২)। কলকাতা। নান্দনিক।
সনজিদা খাতুন
আমার সোনার বাংলা(২০০৫) । কলকাতা। দোয়েল প্রকাশনী।
সনতকুমার চট্টোপাধ্যায়
প্রসঙ্গ বাঙলা ভাষা(সম্পাদিত) (১৯৯৩)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
সুপ্রকাশ রায়
পরিভাষা কোষ(২০১২)। কলকাতা। রাডিক্যাল ইম্প্রেশন।
সফিকুল ইসলাম
রাজসাহীর ভাষা(১৯৯২) । ঢাকা। বাংলা একাডেমী।
সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়
লিপির পদাঙ্ক রেখায়(১৯৯৫)। কলকাতা। সমতট প্রকাশন।
সুবিমলচন্দ্র দে
উদ্ভিদ পরিচয়(২০১২)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
সুবীর মন্ডল
বাংলা লিপির উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ(২০১২) । কলকাতা। দেজ পাবলিশিং।
সুবীর রায়চৌধুরী
সমাজ থেকে বানান(২০১১)। কলকাতা। তালপাতা।
সুবোধ কুমার যশ
সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ও নেপালি শব্দার্থ সমীক্ষা(২০০৫)। কলকাতা। পুস্তক বিপণি।
সুভাষ ভট্টাচার্য
আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধান(১৯৮৪)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
বাঙলা ভাষা চর্চা (১৯৯২) । কলকাতা। সাহিত্য সংসদ।
বাংলা উচ্চারণ অভিধান(১৯৯২)। কলকাতা। সাহিত্য সংসদ।
লেখক ও সম্পাদকের অভিধান(১৯৯৪)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
তিষ্ঠ ক্ষণকাল(১৯৯৯)। বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
বাঙালির ভাষা(২০০০)। কলকাতা। আনন্দ পাবলিশার্স।
ভাষা সাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথ(২০০৫)। কলকাতা। নান্দনিক।
ভাষা ও শৈলী(২০০৬)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ।
ভাষার তত্ত্ব ও বাংলা ভাষা(২০১২)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ,
বিবিধ বিদ্যার অভিধান(২০১৩)। কলকাতা, দে বুক কনসার্ন।
ভাষাকোষ (২০১৩)৷ বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ ৷ কলকাতা ।
সমর ঘোষ ও অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
বিবাহ দর্পণ(২০১২) । কলকাতা। অঞ্জলি পাবলিশার্স।
সলিল বন্দ্যোপাধ্যায়
নামের ভুবনে(২০১১)। কলকাতা। প্রিয়শিল্প প্রকাশন।
সুশান্তকুমার চাকু
বৈষ্ণব কাব্যের কাব্যভাষা(২০১১)। কলকাতা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ।
সুশীলকুমার সামন্ত
কথায় কথায় বলা কথা(২০১২) । কলকাতা। বাকপ্রতিমা।
হাসান মামুদ
বাঙলা লেখার নিয়মকানুন(১৯৯২)। ঢাকা। প্রতীক প্রকাশন সংস্থা।
হায়াদ মামুদ
বাংলা লেখার নিয়মকানুন(২০০৫)। ঢাকা। বাংলা একাডেমী।
হিতেশরঞ্জন সান্যাল
বাংলা কীর্তনের ইতিহাস(২০১২) । কলকাতা। কে. পি. বাগচী।
হেমন্তকুমার সরকার
ভাষাতত্ত্ব ও বাংলা ভাষার ইতিহাস(১৯২৩)। কলকাতা। ওরিয়েন্টাল বুক।
হরিপদ মাইতি
পাখির গান, পাখির অ্যালবাম(২০১৫)। জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী। আগরতলা।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
বাংলা ব্যাকরণ(১৩০১)। কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ।