বই রিভিউ

অনলাইন ইনকামে হালাল-হারাম? প্রেক্ষাপটঃ একাডেমিক রাইটিং

                 অনলাইন ইনকামে হালাল-হারাম? প্রেক্ষাপটঃ একাডেমিক রাইটিং কিছুদিন ধরেই একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নজরে পড়ছে যার টাইটেল...

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

অনলাইন ইনকামে হালাল-হারাম? প্রেক্ষাপটঃ একাডেমিক রাইটিং

                অনলাইন ইনকামে হালাল-হারাম? প্রেক্ষাপটঃ একাডেমিক রাইটিং
কিছুদিন ধরেই একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নজরে পড়ছে যার টাইটেল অনেকটা এরকম “অনলাইনে সম্পূর্ণ হালালভাবে আয় করুন”আমি লক্ষ্য করলাম তাদের সেই ফেসবুক বিজ্ঞাপনে প্রচুর “হাহা রিয়্যাক্ট” পরছে। বোঝাই যাচ্ছে মানুষ ব্যাপারটাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে নাহয়তো তারা মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি এখানে ধর্মীয় কিছু পরিভাষা ব্যাবহার করে তাদের প্রসার করতে চাচ্ছে অথবা মানুষ বুঝতেই পারছে না যে আসলেই অনলাইনেও হারাম বা অবৈধভাবে আয় করা সম্ভব। যাইহোক, অনলাইনে যে আসলেই অবৈধভাবে আয় করা যায় তা আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমি ইসলামিক স্কলার বা আইটি স্পেশালিস্ট নই, তাই এখানে গভীর কিছু পাবেন না
                                         
অনলাইন ইনকামে হালাল-হারাম? প্রেক্ষাপটঃ একাডেমিক রাইটিং
অনলাইন ইনকামে হালাল-হারাম? প্রেক্ষাপটঃ একাডেমিক রাইটিং
         
আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন ঢাকা শহরে কিছু বিজ্ঞাপন দেখা যায় “Assignment Writer Needed লেখা। এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থিদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের এসাইন্মেন্ট এর টপিক আর ডিরেকশন সহ অর্ডার পায়। এসব প্রতিষ্ঠান বা দালাল বাংলাদেশের শিক্ষার্থিদের প্রতি শব্দ প্রতি রেট নির্ধারণ করে দেয়। অনেকসময় অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডির থিসিস পর্যন্ত লিখে দেয়ার অর্ডার পায়। কেউ কেউ নিজের মেধা খাটিয়ে সম্পুর্ন একটি আর্টিকেল লিখে দেয় আবার কেউ কেউ একই টপিকের একটি আর্টিকেল ডাউনলোড করে তা এমনভাবে প্যারাফ্রেইজ করে বা ঘুরিয়ে লেখে দেখে মনে হয় একেবারে নতুন লেখা। এসব কাজ করে রাইটাররা অনেক কম টাকা পেলেও যারা ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অর্ডার পায় তারা অনেক টাকা কামায়। আমার কয়েকটি অভিজ্ঞতা থেকে একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই, আমি এক আমার বিদেশি ক্লায়েন্টের থিসিস পেপার প্রুফরিড করে দিয়েছিলাম, রেফারেন্স লিস্ট হাভার্ড স্টাইলে বানিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাকে আমার যোগ্যতানুসারে কিছু সাজেশন দিয়েছিলাম। সে আমার কাজে অনেক খুশি হয়ে তার এক ক্লাসমেট কে আমার কথা বলেছিল। তার সেই ক্লাসমেট সিম্পল একটা টপিকের ওপর লিটারেচার/সিস্টেমেটিক রিভিউ টাইপ একটা থিসিস আমাকে লিখে দিতে বলেছিল! এজন্য সে অনায়াসে ১ হাজার ইউরো মানে ১ লাখ টাকা দিতে তৈরি ছিল কারণ থিসিস লেখার সময়টুকুতে সে বাইরে কাজ করে কয়েক হাজার ইউরো উপার্জন করতে পারবে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমি তার “লোভনীয়” অফারটা এক্সেপ্ট করিনি। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে একজন ব্রিটিশ বাটপার ভদ্রলোক আছেন যার পেশাই হলো এরকম ফাঁকিবাজ স্টুডেন্টের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে আপনার আমার মত তৃতীয় বিশ্বের পোলাপান দিয়ে এসব একাডেমিক অবৈধ কাজ করিয়ে নেয়া। যাইহোক, এরকম আরো অসংখ্য কারণে আপনার অনলাইন ইনকাম অবৈধ হতে পারে। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।     
B.A in ESOL, Institute of Modern Languages, University of DhaKa Email: md.didar11@yahoo.com


শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটি থেকে আমি কি পেলাম?

                               ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটি থেকে আমি কি পেলাম?
                               Dhaka University Research Society  থেকে আমি কি পেলাম?

২০১৭ সালে আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন একদিন কলাভবনের সামনে হেটে যেতেই একটা ওয়ার্কশপের ব্যানার চোখে পড়লো A Candid Journey to Research। Research শব্দটিই তখন কেমন যেন অপরিচিত লাগতো, তাই কৌতুহলবশত সম্ভবত ২০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। সারাদিনের প্রোগ্রামে ICDRB এবং BIDS এর রিসার্চার এবং ঢাবির কয়েকজন প্রফেসর লেকচার দিলেন। গবেষণা সম্পর্কে নানান খুটিনাটি দিক সহজ ভাষায় তুলে ধরলেন। সত্যি করে বলছি, সেদিনটি আমার ঢাবি জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি দিন। সেদিনের আয়োজনে পুলকিত হয়ে DURS এর মেম্বার হয়ে গেলাম। তবে সমস্যা হলো আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা যাওয়া করে ক্লাস করায় DURS এর সব প্রোগ্রামে ইচ্ছে থাকলেও যোগ দিতে পারতাম না, এখনো পারিনা।  

যাইহোক, একদিন আমার একজন প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমাকে ডেকে বললেন, দিদার তুমি নাকি রিসার্চ সোসাইটি না কোথায় যেন আসা যাওয়া করো? তুমি এসব কাজ করতে চাইলে আমি তোমাকে একটা ছোট কাজ দিবো। আমি তো পুরাই এক্সাইটেড হয়ে রাজি হয়ে গেলাম। স্যার আমাকে ইউরোপীয় একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন এমন একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন যিনি তার থিসিস লিখছেন। আমাকে তিনি এসাইন্মেন্ট দিলেন তার “লিটারেচার রিভিও” অংশের জন্য কিছু পেপারের সামারি করে দিতে আর থিসিসটার গ্র্যামার ইত্যাদি চেক করে দিতে। এসবের কিছুই জানতাম না তবে ইন্টারনেট আর স্যারের সহায়তায় কাজ করতে করতে শিখে গেলাম। কাজ শেষ হতে না হতেই ওই ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে কত টাকা দিবো? আমি বললাম, কি বলছেন ভাইয়া, ইম্পসিবল! আমি শেখার জন্য কাজ করেছি, টাকা নিবো না। তিনি জোর করে চার হাজার টাকা ব্যাংকে পাঠিয়ে দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, সেই থেকে শুরু।

এরপর এই দেড় বছরে অনেক কাজ করলাম। আমার দুলাভাই ফিনল্যান্ড থেকে বিএসসি করেছেন। তিনি থিসিসে এ প্লাস পেয়েছিলেন যেটার প্রুফরিড করেছিলাম আমি। তিনি পাঠালেন ১০ হাজার টাকা। দুলাভাইয়ের এক আফ্রিকান ক্লাস্মেইট এর থিসিস প্রুফরিড করে পেলাম ১৫ হাজার টাকা। এরপর থেকে আমি পকেট মানির জন্য টিউশনি ছেড়ে রিসার্চ রিলেটেড কাজ আর অনুবাদ শুরু করলাম। এবছর রমজানের সময় DURS এর গ্রুপে একজন গবেষকের জন্য Research Assistant Needed লেখা একটি সার্কুলার দেখলাম, কিন্তু হতাশ হলাম কারণ যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে এমফিল বা মাস্টার্স আর ডিসিপ্লিনও ভিন্ন। আমি বাচ্চা মানুষ, পড়ি মাত্র থার্ড ইয়ারে। ভাবলাম এপ্লাই করতে তো দোষ নেই! আলহামদুলিল্লাহ সিলেক্টেড হয়ে গেলাম। দেখা পেলাম অত্যন্ত মেধাবি এবং আন্তরিক একজন গবেষকের যার নির্দেশনায় গত চার মাস ধরে কাজ করছি এবং অনেক অনেক কিছু শিখছি। বোনাস হিসেবে ইতোমধ্যে পেয়েছি ১৬ হাজার টাকা and it goes on। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমি যা শিখেছি তা কখনোই টাকার অংকে মুল্যায়ন করা যাবে না।

                                                                         
Dhaka University Research Society
Dhaka University Research Society

সারকথা হলো আমার এতকিছু শেখার পেছনে মূল ক্রেডিট টা কিন্তু DURS এর। আমি ঢাবিতে শুধুমাত্র এই একটি সংগঠনের সাথেই জড়িত তাও আবার বেশিরভাগ সময় ফিজিক্যালি উপস্থিত থাকতে পারি না।  তবুও DURS থেকে আমি আমার বেস্ট টা নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি, DURS আমার মতো আপনাদের সবাইকে আলোকিত করে যাবে ইংশাল্লাহ।       
  
নোটঃ রিসার্চ রিলেটেড কাজ করে বৈধ বা হালালভাবে যেমন উপার্জন করা যায় তেমনি অবৈধভাবেও করা যায়। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে একটি পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করবো ইংশাল্লাহ।